রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঋণ বছরে বাড়ছে ১৯ শতাংশ হারে

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঋণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার ও জ্বালানি আমদানি এবং উড়োজাহাজ কেনাসহ অন্যান্য খাতে প্রতি বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এসব ঋণের বিপরীতে সরকারকে দিতে হচ্ছে গ্যারান্টি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২৪-২৫ থেকে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সরকার 'গ্যারান্টি' দিচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণের গ্যারান্টির বেশিরভাগই বাণিজ্যিক বিমান চলাচল, বিদ্যুৎ ও সরকারি পণ্য এবং সার কারখানায় দেওয়া হয়।

সংস্থাগুলো যদি সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তবে সরকারের গ্যারান্টি দেখানো হয়। তখন ঋণের দায়বদ্ধতা সরকারের ওপর পড়ে। এটি সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাবে সরকারের গ্যারান্টিতে এক লাখ ১৭ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঋণ ছিল।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ছিল ৯২ হাজার ৬০১ কোটি টাকা।

এ ধরনের ঋণের পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর কাছে ঋণ এখন সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৫৩ হাজার ৫৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ঋণ ১৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার বেশি। এর পুরোটাই নেওয়া হয়েছে সার আমদানিতে।

এ ছাড়া, গত নভেম্বরে নরসিংদীতে উদ্বোধন হওয়া ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১১৩ কোটি টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইসের ঋণ আট হাজার ৫৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, জ্বালানি খাতে ঋণ সাত হাজার ৬৬০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ঋণ দুই হাজার ৪৩২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আংশিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো সরকারের আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাদের ঋণ রাষ্ট্রকে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতিতে ফেলছে।

এ ছাড়াও, অনেক প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখতে সরকারকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে।

করদাতাদের টাকা খরচ করে লোকসানে চলা সংস্থাগুলো চালানোর পরিবর্তে বেসরকারিকরণের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২৪ অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৩০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এর মধ্যে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের গ্যারান্টি দেওয়া ঋণ কখনো খেলাপি হয়নি।

তবে এই প্রক্রিয়া সহজ করতে ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়াতে বিদ্যমান নির্দেশিকা সংশোধনের পরিকল্পনা করছে সরকার।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ঋণ দেশের আস্থা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বড় বাধা।'

তিনি আরও বলেন, 'রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো যখন ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়, তখন এর প্রভাব বেসরকারি খাতেও পড়ে। সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, 'বেশিরভাগ সরকারি সংস্থা লোকসানে আছে। সরকার রাজনৈতিক কারণে সেগুলো বন্ধ করছে না।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার ভর্তুকি দিয়ে ও করদাতাদের টাকায় ঋণ পরিশোধ করে এসব সংস্থা চালিয়ে যাচ্ছে।'

তার মতে, দীর্ঘ বছরের ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বেসরকারি করে দেওয়াই হবে চূড়ান্ত সমাধান।

Comments

The Daily Star  | English

22 sectors still pay wages below poverty line

At least 22 sectors in Bangladesh continue to pay their workers much less than what is needed to meet basic human needs.

6h ago