প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমেছে ৮ লাখের বেশি

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হারও কমতে শুরু করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আট লাখ ৩২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী কমেছে বলে এক সরকারি প্রতিবেদনে জানা গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) প্রস্তুত করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) ২০২৩ অনুসারে, কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কমেছে।

বিপরীতে, কিন্ডারগার্টেনে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী বেড়েছে বলে জানিয়েছে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, এর প্রধান দুটি কারণের একটি দেশে জন্মহার কমে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণ হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার থাকলে তা বাদ পড়েছে।

'আবার করোনা মহামারির পর আর্থিক সংকটের কারণে কিছু শিক্ষার্থী কওমি মাদ্রাসায় চলে গেছে। এটাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার আরেকটি কারণ', বলেন তিনি।

এপিএসসি-২০২৩ এর তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ এই পর্যায়ের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল এক কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫। ২০২২ সালে প্রাথমিক স্তরের এক লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল দুই কোটি পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৯১।

এই শুমারি আরও বলেছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমেছে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে এক দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হারও কমতে শুরু করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের 'ইনটেগ্রেটেড প্রাইমারি এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন' নামের সফটওয়্যারটিতে তথ্য সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়, যার মাধ্যমে স্কুলের ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ব্যবস্থাপনা, ছাত্র ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক আদমশুমারি, উপবৃত্তি ব্যবস্থাপনা ও বার্ষিক বই বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এর কারণে তথ্য পুনরায় নিশ্চিত হওয়ার সহজতর হয়েছে এবং একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার থাকার বা শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

'এই সফটওয়্যারের কারণে এপিএসসি-২০২২ এর তুলনায় এপিএসসি-২০২৩ এ শিক্ষার্থী নথিভুক্তির সংখ্যা কমেছে', বলা হয় প্রতিবেদনে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমেছে। ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল এক কোটি নয় লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫। ২০২২ সালে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২২।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালে ২৬ হাজার ৪৬১টি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৫ হয়েছে। ২০২২ সালে ২৬ হাজার ৪৭৮টি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ আট হাজার ৬৭৯।

এশিয়া সাউথ প্যাসিফিকের অ্যাডাল্ট এডুকেশন অ্যান্ড লাইফলং লার্নিংয়ের অ্যাডভোকেসি অ্যাডভাইজর কেএম এনামুল হক বলেন, অনেক অভিভাবক কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বেছে নেওয়ায় মূলধারার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।

'অনেক পরিবার, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো করোনা মহামারির কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং সেজন্য তারা তাদের সন্তানদের কওমি মাদ্রাসার ভর্তি করেছে। কারণ সেখানে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম', বলেন তিনি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এ বিষয়ে তাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই।

এদিকে, করোনা মহামারির কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমলেও ২০২৩ সালে তা আবার কিছুটা বেড়েছে।

গত বছর দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও একই পর্যায়ের বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৬৩০।

২০২২ সালে এর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার দুই, ২০২১ সালে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯১ ও ২০২২ সালে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯।

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

4h ago