টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

শূন্যের শতক, শতকের শূন্য

এবারের আসরে হয়েছে এমন অনেক কিছু, যা আগে কখনোই হয়নি

সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে ব্যাটারদের শতক উদযাপন করতে দেখেছেন কতবার? মনে করে দেখুন তো। মনে পড়ছে না? শতক হলেই না স্মৃতিতে আসবে! ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হয়নি একটিও। তবে ব্যাটাররা মিলে ভিন্ন উপায়ে হলেও একটা 'সেঞ্চুরি' কিন্তু করেছেন- শূন্যের শতক। এবারের আসরে ডাকের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েই গেছে!

২০২৪ সালের আগে কখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে শূন্যের শতক হয়নি। নবম আসরে ডাকের গণনা থেমেছে ১১২টিতে। এক আসরে সবচেয়ে বেশি ডাকের আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ বিশ্বকাপে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের মাঠে ব্যাটাররা শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছিলেন ৭৯ বার। এই সংস্করণের পরবর্তী বিশ্বকাপে ডাক সংখ্যা থামে ৬৬টিতে। কোনো আসরে পঞ্চাশের বেশি ডাক দেখা গেছে আর মাত্র একবার। বাংলাদেশের মাটিতে ২০১৪ সালের আসরে খেলা হয়নি মোট ৩৫ ম্যাচের বেশি, তবুও ব্যাটাররা রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেছিলেন ৫৭ ইনিংসে।

গত তিনটি আসরেই ম্যাচ হয়েছে অন্তত ৪২টি। এবারের আসরে তো মাঠে খেলা গড়িয়েছে ৫২ ম্যাচে। ম্যাচ সংখ্যা বাড়ার কারণেই কি তবে ডাকের পরিমাণ বেড়েছে বলে ভাবছেন? গড়ে প্রতি ডাকে বল লেগেছে কতটি, সেই হিসাব তাহলে দেখা যাক।

২০২৪ সালে প্রতি ডাকের জন্য গড়ে বলের দরকার পড়েছে প্রায় ৯৯টি। এর আগে কোনো আসরেই প্রতি ডাকের জন্য বলের পরিমাণ একশর কম থাকেনি। একটি আসর বাদে বাকি আসরগুলোতে এই গড় থেকেছে ১২৪ থেকে ১৬৩ বলের মধ্যে।

শুধুমাত্র ২০১২ সালের বিশ্বকাপে প্রতি ডাকের জন্য গড়ে দুইশর বেশি সংখ্যক বল লেগেছে। শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত আসরটিতে সবচেয়ে কম শূন্যও (২৯) পেয়েছিলেন ব্যাটাররা। এর আগের দুটি বিশ্বকাপেই সমান সংখ্যক ডাক এসেছিল। ২০০৯ ও ২০১০ বিশ্বকাপে খালি হাতে ব্যাটাররা মাঠ ছেড়েছিলেন ৩৯ বার। এই তিনটি আসরের মতো ২০০৭ বিশ্বকাপেও হয়েছিল ২৭ ম্যাচ। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাটির প্রথম কিস্তিতে ৪২টি ডাক হাজির হয়েছিল ব্যাটারদের জীবনে।

২০১৪ সালে পঞ্চম আসরে প্রথমবারের মতো পঞ্চাশটি ডাক দেখে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ। তবে সমান ৩৫ ম্যাচের পরবর্তী আসরে ডাক সংখ্যা যায়নি ৪৬ এর ওপরে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ানে আয়োজিত এবারের বিশ্ব আসরে ব্যাটাররা যেখানে শূন্য মারার শতক গড়েছেন, কোনো ইনিংসে তাদের কেউ পারেননি শতরান করতে। সর্বোচ্চ ৯৮ রানে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। তবে এর আগেও শতকবিহীন আসর দেখেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সেঞ্চুরির উদযাপনে মেতে উঠতে পারেননি কেউই।

অন্য আসরগুলোর মধ্যেও কোনোটিতেই অবশ্য সেঞ্চুরি সংখ্যা দুইয়ের উপরে যায়নি। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপের আগে ক্যারিবিয়ানে সবশেষ আসরে তা হয়েছিল প্রথম। এশিয়ার মাটিতে পরপর ২০১৪ ও ২০১৬ সালের বিশ্বকাপগুলোতেও হয়েছিল সমান সংখ্যক সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ সালেও দুবার সেঞ্চুরির স্বাদ মিলেছে ব্যাটারদের। অন্তত একটি সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি আসরে- ২০০৭, ২০১২ ও ২০২১ সালে।

এবার সবচেয়ে বেশি ১৩টি ডাক মেরেছেন উগান্ডার খেলোয়াড়েরা। তাদের পেছনে ১০টি ডাক নিয়ে রয়েছে আফগানিস্তান। আর কোনো দেশের ডাক সংখ্যা দশে যায়নি। বাংলাদেশিরা তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯টি শূন্য রানের ইনিংস খেলেছেন। ২০ দলের মধ্যে একমাত্র স্কটল্যান্ডের কোনো ব্যাটার শূন্য রানে আউট হননি।

এবার শূন্যের সংখ্যা শতক ছাড়িয়ে গেল। অন্যদিকে শতকের সংখ্যা শূন্যতেই আটকে থাকল। ২০২৪ বিশ্বকাপে শূন্যের ছড়াছড়ি এখানেই শেষ নয়! পুরো একটা ওভার শেষ হয়ে গেছে, স্কোরবোর্ডে রান যোগ হয়েছে শূন্য- এমনটাও তো দেখা গেছে হরহামেশা। এর আগে কোনো বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২১টি মেডেন ওভার হয়েছিল। এবার এক আসরেই তার দ্বিগুণ তো বটে, মেডেনের গণনা শেষ হয়েছে ৪৪টিতে। শ্রীলঙ্কায় ২০১২ সালে ২১টি মেডেন ওভার পেয়েছিলেন বোলাররা। এর বাইরে আর কোনো আসরেই ২০টির বেশি মেডেন হয়নি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরকে তাহলে শূন্যের বিশ্বকাপও বলা চলে!

Comments

The Daily Star  | English
empty containers shipment

Making sense of revisions in balance of payments

Bangladesh Bank's latest data on the balance of payments has remarkably altered the narrative on the drivers of external stress without changing the signal on the overall stress. The bottom line on persistent external imbalance remains pretty much the same but the composition is palpably different

1h ago