ইন্টারনেটের ধীরগতিতে ক্ষতিগ্রস্ত আইটি ব্যবসা

আইটি ব্যবসা
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হলেও ধীর গতির কারণে বেশিরভাগ সফটওয়্যার, আইটি ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের কাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ইন্টারনেটের গতি অনেক কম।

এ কারণে তাদের উত্পাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যহারে কমার পাশাপাশি বাড়ছে পরিচালন খরচ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ইন্টারনেট চালুর পর থেকে উত্পাদনশীলতা প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।

তারা আরও বলছেন, প্রাথমিকভাবে কয়েকদিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ ও বর্তমানে কম গতির ইন্টারনেটের কারণে বিদেশি গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের গতি গুরুত্বপূর্ণ।

এই অস্থিতিশীলতা আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান চুক্তিগুলোকে হুমকিতে ফেলেছে। ভবিষ্যতে ব্যবসা হারানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রাহকরা কাজের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের দাবি করছেন।

বিশ্বব্যাপী ব্যাক অফিস ও লাইভ সাপোর্ট দেওয়া প্রতিষ্ঠান এএসএল বিপিওর প্রধান নির্বাহী জায়েদ উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইন্টারনেটের এমন গতিতে গ্রাহকরা খুশি নন।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি গ্রাহকরা সব সময় জানতে চাচ্ছেন সবকিছু কখন স্বাভাবিক হবে।'

তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নির্ধারিত কাজগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এটি তাদের উৎপাদনশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইন্টারনেটের কম গতির কারণে আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইল পাঠানো ও ডাউনলোডে সমস্যার পড়ছেন।'

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও একে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সরকার গত জুলাইয়ে ১০ দিনেরও বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ও পাঁচ দিন ব্রডব্যান্ড বন্ধ রাখে।

গত ২৪ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ইন্টারনেটে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রপ্তানি বা স্থানীয় বাজার যাই হোক না কেন ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

'আজকের পরিস্থিতিতে ক্লাউড-ভিত্তিক উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য বেশি ব্যান্ডউইথ দরকার।'

'প্রায় সব আইটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজে প্রয়োজনের তুলনায় কম গতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন,' যোগ করেন তিনি।

গত দুই বছর ধরে চাপে থাকা সফটওয়্যার ও আইটি সেবার রপ্তানি এ বছর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফাহিম মাশরুর।

সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ড্রিম৭১ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেশাগত কাজের জন্য যে গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন তার ধারেকাছেও নেই। আমাদের উন্নয়ন ও দৈনন্দিন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।'

'মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারছি না,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে তা ব্যবহার করতে পারলেও ফাইল শেয়ারিং করা যাচ্ছে না। বিদেশি গ্রাহকদের কাছে বিব্রত হচ্ছি।'

প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'ফেসবুক বন্ধ ও ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে এসব মানুষের দৈনিক আয় মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Why Dhaka has become unliveable

To survive Dhaka, you need a strategy. Start by embracing the absurd: treat every crisis as a plot twist.

11h ago