মন্দির ভাঙচুর-হিন্দুদের ওপর হামলা: জেলায় জেলায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ

শরিয়তপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন। ছবি: স্টার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর সহিংসতা, মন্দির ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এসময় এসব ঘটনার তদন্ত এবং জড়িতদের কঠোর বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

শরীয়তপুর

শরীয়তপুরে আজ শনিবার দুপুরে শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও যোগ দেন। 

এসময় জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি অনিক ঘটক চৌধুরী বলেন, 'আমাদের দেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এখানে আমরা সকল ধর্মাবলম্বীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিলেমিশে নিরাপদে থাকতে চাই। কিন্তু আজকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখন, নির্যাতন ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে শঙ্কায় আছি। তাই সরকার ও প্রশাসনের কাছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দাবি করছি।'

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব হেমন্ত দাস বলেন, 'আমরা আতঙ্ক ও শঙ্কায় আছি। যেভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে, মন্দির ভাঙচুর করা হচ্ছে, তা দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি। আমরা আর কাঁদতে চাই না। আপনার আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমরাও এ দেশের নাগরিক। আমাদেরও নিরাপদে বাঁচার অধিকার আছে। শরীয়তপুর শহরের ধানুকা মনসা বাড়ি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা চাই একটি নিরাপদ বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ।'

দিনাজপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন। ছবি: স্টার

দিনাজপুর

দিনাজপুরসহ সারা দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। হামলাকারীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা না হলে আরও বড় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা

দিনাজপুর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ হয়।

পরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন করেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে যখনই কোনো রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় তখনই হিন্দুরা আক্রমণের শিকার হয়। এখনো নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, নীরবে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। 

বক্তারা জানান, ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত দিনাজপুর সদর, বিরলসহ অন্যান্য উপজেলায় ২০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এসময় তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব থানাকে সচল এবং হিন্দুদের ওপর হামলায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন।

এসময় দিনাজপুর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: স্টার

বরিশাল

সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের উদ্যোগে শনিবার দুপুরে অশ্বিনীকুমার হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। 

এসময়ে বক্তারা জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও হিন্দুদের বাসা-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। হামলা প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নতুন এই পরিবর্তনে এটি কাম্য হতে পারে না। বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হলেও এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পক্ষই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

বক্তারা সব হামলা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন, সেইসঙ্গে সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও সংসদে ১০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। 

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভানু লাল দে জানান, তারা নির্ঘুম রাত পার করছেন, আতঙ্ক নিরসনে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েও পাচ্ছেন না। 

এসময় আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক কিশোর কুমার বালা, বাসদ সমন্বয়ক ডা. মনিষা চক্রবর্তী, শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট এ কে এম আজাদ ও কাজল দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এসে শেষ হয়। বক্তারা এসময় আগামী দু-দিন এই প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা মিছিল থেকে এইসব কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

শনিবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ জড়ো হন। পরে তারা চাষাড়ায় বিজয়স্তম্ভের সামনে অন্তত আধঘণ্টা অবস্থান নেন। এতে শহরের ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

পরে তারা চাষাড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে নিতাইগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত মিছিল করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা সড়ক ছাড়েন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা ও মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করেন।

একই সময়ে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভাঙচুরের বিচার চেয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সমমনা নামের একটি সামাজিক সংগঠনও।

তবে গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-ছাত্রী ও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলের সদস্যদের মন্দির ও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় রাতভর পাহারা দিতে দেখা গেছে।

নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: স্টার

নাটোর

সারা দেশে চলমান হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে নাটোরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। 

আজ শনিবার বিকেলে নাটোর কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করেন তারা। 

এসময় বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে হিন্দুদের সুরক্ষার দাবি জানান। তারা বলেন, সারাদেশে মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকার সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতিকারীরা।

নাটোর হিন্দু মহাজোটের সদস্য সচিব দেবাশীষ কুমার সরকার, যুব মহাজোট নাটোরের সভাপতি সুজিত ঘোষ, নাটোর ইসকন মন্দিরের পরিচালক নাম প্রেম দাস প্রভু ও সচেতন হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট প্রসাদ কুমার তালুকদারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

টাঙ্গাইলে মানববন্ধন। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল

সারা দেশে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শনিবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট জেলার সভাপতি বিপ্লব দত্ত পল্টন, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সরকার, হিন্দু যুব মহাজোটের আহ্বায়ক গৌতম কর্মকার, সদস্য সচিব বিধান কৃষ্ণ পাল, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি শোভন সরকার, সাধারণ সম্পাদক পল্লব সাহা প্রমুখ। 

পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago