আইডিআরএ প্রধানের পদত্যাগের দাবি দুর্নীতিগ্রস্ত সোনালী লাইফের কর্মীদের

আইডিআরএ

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর পদত্যাগ দাবি করেছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

গতকাল তারা মতিঝিলের আইডিআরএ প্রাঙ্গণে স্লোগান দিয়ে সোনালী লাইফের আর্থিক উন্নতির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়োগ দেওয়া প্রশাসককে প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন।

গত এপ্রিলে অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের ছয় সদস্য পরিচালক হিসেবে থেকে বিমা প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দেশের শীর্ষ পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

২০২৩ সালে গোলাম কুদ্দুসকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগসহ ১৭টি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য আইডিআরএ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অডিট ফার্ম হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়।

আইডিআরএর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১১ আগস্টের পর আইডিআরএর মতিঝিল অফিসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সোনালীর কর্মীরা বিক্ষোভ করলেন। তখন তারা আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর উদ্দেশে আপত্তিকর স্লোগানও দেন।'

তিনি জানান, ১১ আগস্ট পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল যে আইডিআরএ'র চেয়ারম্যান জয়নুল বারীকে নিরাপদে বাসায় ফিরতে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ছেড়ে ভারতে পালানোর পর অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিক্ষোভ করছেন।

সোনালী লাইফের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রবিউল হাসান রাসেল ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ও তার সহকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, 'জয়নুল বারী দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান। অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। তার কারণে আমাদের ব্যবসার দিন দিন ক্ষতি বাড়ছেই।'

'আমরা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করছি ও চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'

মোহাম্মদ জয়নুল বারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিক্ষোভকারীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করায় গত ১২ ও ১৩ আগস্ট অফিসে যাইনি। বিক্ষোভকারীরা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলছে সেটার প্রমাণ দেওয়া উচিত।'

এ বিষয়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর তাকে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরীক্ষার পর গত এপ্রিলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফেরদৌসকে সোনালী লাইফের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি বিমা প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষার কাজ করছে। ২০২৩ সালে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগসহ ১৭ অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তারা।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেছেন।

আইডিআরএ জানায়, নিরীক্ষায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ অর্থ দেওয়াসহ নানান মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আইডিআরএ আরও জানায়, অবৈধভাবে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, পরিচালকদের অতিরিক্ত লভ্যাংশ দেওয়া, বিদেশ ভ্রমণ ও চিকিৎসার খরচ হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৫ জুলাই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, তার পরিবারের ছয় সদস্য ও এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালী লাইফের সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৯৩ এজেন্টসহ ২০৪টি শাখা আছে।

Comments