ভুয়া খবর চিহ্নিত করবেন যেভাবে

ভুয়া খবর
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে আগেও কি গুজব বা মিথ্যা সংবাদ ছিল না? ছিল। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি প্রশস্ততার কারণে আজকাল গুজব একটু বেশিই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর সাক্ষী আজ বাংলাদেশের আন্দোলন ও বর্তমান অস্থিতিশীল প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে বিশ্বের আরও বহু স্থান।

এই লেখায় আমরা মূলত 'সিরিয়াস কনটেন্টে'র আড়ালে ভুল ও মিথ্যা তথ্য যাচাইয়ের কিছু কৌশল নিয়ে আলাপ করব।

সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভর করুন

যদি এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন, তবে ভুলভাল খবর থেকে দূরে থাকা অনেকটাই সহজ। নতুন কোনো সংবাদ নজরে পড়লে, প্রথমেই দেখে নিন তা কোনো বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে এসেছে কি না। নামিদামি সংবাদ সংস্থাগুলোর নিজস্ব ফ্যাক্ট-চেকিং প্রক্রিয়া বেশ পাকাপোক্ত এবং তাদের গেটকিপিংও নির্ভরযোগ্য। কারণ প্রতিষ্ঠিত সংস্থা বা ব্র্যান্ডের জন্য কোনো ধরনের বড় ভুলই বিপজ্জনক, একেবারে মিথ্যে বা বানোয়াট খবর ছাপার তো কথাই আসে না।

শুধু সংবাদ নয়, যদি কোনো ফেসবুক গ্রুপের স্ট্যাটাসও দেখেন, সেটি খতিয়ে না দেখে অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার থেকে বিরত থাকুন। একাধিক বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে সেটি যাচাই করে নিন।

প্রতারক থেকে সাবধান

মিথ্যে সংবাদের জগতে আরো বেশি অন্ধকার অঞ্চল জুড়ে থাকে প্রতারক কন্টেন্ট, ওয়েবসাইট, অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। এখানে সংবাদ উৎস নিজেই বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হওয়ার ভান করে। কোনো নামকরা সংবাদ সংস্থার নামের অনুকরণে, প্রায় একইরকম ইউআরএল ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভুল তথ্য ছড়াতে পারে।

এমন সন্দেহ হলে প্রথমেই সংবাদ উৎসের নাম, এর বানান এবং সর্বোপরি এ মাধ্যমে প্রকাশিত অন্যান্য সংবাদের মান ও প্রকৃতি যাচাই করতে হবে। এতে করে বোঝা সহজ হবে, এই মাধ্যমকে আদৌ বিশ্বাস করা চলে কি না।

ফ্যাক্ট-চেকারের সাহায্য নিন

অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজ আছে, যারা বিভিন্ন ফেক নিউজ যাচাই করে এবং এর পেছনের সত্য বের করে আনে। অনলাইনে কী ধরনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে এবং মূল ঘটনা কী, এ সবই তারা ব্যাখ্যা করে। অনেক সময় অনেক আগের কোনো ছবি বর্তমান প্রেক্ষাপটের ক্যাপশন লিখে আবার প্রকাশ করা হয়, যা দেখে মনে হয় এটি এখনকার সময়ের খবর। এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে এই সাইটগুলোতে কাজ করা হয়।

পুরোনো বোতলে নতুন মদ কি না যাচাই করে নিন

আগের কথা সূত্র ধরেই বলা যায়, অনলাইনে প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক পুরোনো ভিডিও ও রিল ছড়িয়ে দেওয়া হয়। হতে পারে সেই ভিডিও, রিল বা ছবিটি 'আসল'। কিন্তু এতে করে এমনটা প্রমাণ হয় না যে সঙ্গে জুড়ে দেওয়াও ক্যাপশনটিও আসল। ভিডিও, রিল বা ছবিটি আসল হলেও সেটি হতে পারে ভিন্ন কোনো স্থানের, ভিন্ন কোনো সময়ের।

এমন পরিস্থিতিতে সাবধান থাকতে হলে নিজেকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকতে হবে এবং নিজের প্রোফাইল বা ইনবক্সে খবরটি শেয়ার করার আগে নিজের চিন্তাশক্তি দিয়ে তা মূল্যায়ন করে নিতে হবে। অবশ্যই আবারও একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যাচাই করা চাই।

ডিপফেকের দুনিয়া থেকে সাবধান

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেকটা ভীতিকর পর্যায়ে চলে গেছে। প্রযুক্তিগত বিভিন্ন টুল, কৃত্রিম ছবি/ভিডিও/অডিও ক্লিপের দৃশ্যে এমন অনেকের চেহারাই জুড়ে দেওয়া যায়।

দিনের পর দিন ডিপফেক আরও উঁচু পর্যায়ে চলে যাচ্ছে ঠিকই, তবে এখনও সত্যি-মিথ্যা যাচাইয়ের কিছু সুযোগ রয়েছে। ছবি বা ভিডিওতে থাকা মানুষটির আঙুলের সংখ্যা কি ঠিকঠাক আছে? ত্বকটা কি একটু বেশিই মসৃণ দেখাচ্ছে? অডিওর সঙ্গে ভিডিওর সামঞ্জস্য কতটুকু? ঠোঁট নড়া আর কথা বলার সামঞ্জস্য আছে তো? এমন আরও বহু বিষয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে ডিপফেক শনাক্ত করা সম্ভব।

অনলাইনেও বিভিন্ন ডিপফেক ডিটেক্টর পাওয়া যায়। তবে নিজের চোখ-কান খোলা রেখে চলা এবং সাবধানে থাকার কোনো বিকল্প নেই। আর সেইসঙ্গে বারবার খেয়াল রাখতে হবে বিশ্বস্ত তথ্যসূত্রের কথা।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi Migrant Workers Deaths Over The Years

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

9h ago