মণিপুরে কারফিউ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট বন্ধ

মণিপুরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস শেল ছুঁড়ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: রয়টার্স
মণিপুরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস শেল ছুঁড়ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: রয়টার্স

ভারতের মণিপুর রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সহিংসতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের কয়েকটি জেলায় অনিদৃষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি ও পাঁচ জেলায় পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে সরকার।

আজ এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স, ডয়চে ভ্যালে ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মঙ্গলবার নতুন করে রাজধানী ইমফলে ছাত্রদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানানো হয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এই উদ্যোগ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট বন্ধ

মণিপুরে বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
মণিপুরে বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

সরকারি আদেশে আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজ্যের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ বন্ধ থাকবে।

ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে মঙ্গলবার পরপর দুইটি নোটিস জারি করে মণিপুরের রাজ্য সরকার।

প্রথম নোটিসে পুরো রাজ্যেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। পরে জানানো হয়, ইমফল পশ্চিম, ইমফল পূর্ব, থউবাল, বিষ্ণুপুর এবং কাকচিং জেলায় সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা আগামী পাঁচদিনের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। সহিংসতা বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রশাসনের দাবি, একটি মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর প্রচার করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। এটা ঠেকাতেই ইন্টারনেট বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর আগেও বেশ কয়েকবার, একই কায়দায় মণিপুরে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।

নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষ

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরে চলছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

ইতোমধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। মাঝে কিছুদিন উত্তাপ কমলেও এ মাসের শুরু থেকে নতুন করে এ অঞ্চলে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।

১ সেপ্টেম্বর মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে হামলা, পাল্টা-হামলা শুরু হয়। পুলিশের মতে, কুকি জঙ্গিরা ড্রোনের মাধ্যমে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করে হামলা চালাচ্ছে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

তবে কুকি সম্প্রদায় এই দাবি অস্বীকার করেছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সহিংসতা

মণিপুরে বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
মণিপুরে বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

সোমবার ড্রোন হামলার প্রতিবাদে হাজারো মেইতেই শিক্ষার্থী সড়কে নেমে আসে। রাজ্যের গভর্নরের বাসার মূল ফটকের সামনে এসে পাথর ও প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজ্যের নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করেন বিক্ষভকারীরা।

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা টিয়ার গ্যাস শেল ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে। এতে ৪৫ জন বিক্ষোভকারী সামান্য আহত হয়েছেন বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইমফলে মেইতেই ছাত্ররা বড় আকারে বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং মিছিল করে।

রাজভবনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল সেই মিছিল। তাদের দাবি, পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) ও রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।

ইমফলে কংগ্রেস ভবনের সামনে সেই মিছিলকে আটকে দেয় নিরাপত্তাকর্মীরা। মিছিলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হাজারো নারীও যোগ দিয়েছিলেন। হাতে মশাল নিয়ে মিছিল করছিলেন তারা। নিরাপত্তাকর্মীর বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘাত হয়।

এ ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এর পরই দ্রুত ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ অব্যাহত

মণিপুরে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত স্টিংগার রকেটের ধংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স
মণিপুরে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত স্টিংগার রকেটের ধংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে আসাম-মণিপুর সীমান্তের জিরিবামে নতুন করে উত্তেজনা দেখা যায়। কুকিদের একটি গোষ্ঠী মেইতেই এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে—এমন অভিযোগের জেরে এই পরিস্থিতির উদ্রেক হয়। অভিযোগ মতে, হাতে তৈরি রকেট হামলাও চালানো হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গত শনিবার মণিপুরের জিরিবাম জেলায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্দুক হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন। এক নিরাপত্তা সূত্র জানান, এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার সন্দেহভাজন জঙ্গিরা মনিপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মাইরেমবাম কৈরেংয়ের বাসভবনে রকেট হামলা চালালে এক জন নিহত ও আরও ছয়জন আহত হন।

জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী পার্শ্ববর্তী জেলা চুরাচাঁদপুরে তিনটি বাংকার ধ্বংস করে। সেখানে সামরিক হেলিকপ্টার দিয়ে টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এক বয়স্ক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানা গেছে। এরপরই নতুন করে উত্তাপ ছড়ায় গোটা মণিপুর জুড়ে।

বস্তুত, গত একবছর ধরে কার্যত দুইভাগে ভাগ হয়ে আছে মণিপুর। পাহাড় অঞ্চল কুকিদের দখলে, উপত্যকা মেইতেইদের দখলে। দুই পক্ষের সংঘাতের জেরে হাজারো মানুষ বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা মণিপুরের ভেতরে ও আশেপাশের রাজ্যগুলিতে বেশ কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছেন।

এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২২৫ জন নিহত ও ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে এই সহিংসতা চিন্তায় ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সরকারকে।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

3h ago