বাংলাদেশে সংস্কার প্রচেষ্টায় মার্কিন সম্পৃক্ততা নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনা: পররাষ্ট্র সচিব

‘আমরা সবেমাত্র অবৈধ তহবিল প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটা করতে সময় লাগবে।’
ছবি: বাসস থেকে নেওয়া

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন রোববার বলেছেন, একটি উচ্চ-পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের চলমান সফরকে ঢাকা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে ওয়াশিংটনের অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততার একটি ভিত্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি যে কীভাবে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থপূর্ণ উপায়ে যুক্ত হতে পারি, আজকের আলোচনাটি তার ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং আগামী দিনেও বিভিন্ন আকারে সংলাপ অব্যাহত থাকবে। 
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

ছয় সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল আর্থিক ও রাজস্ব খাত সংস্কারে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। তিনি বলেন যে, উভয় পক্ষ আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে, পরিবর্তনের প্রয়োজন এমন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে এবং সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে সহায়তা করার জন্য মার্কিন পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আশ্বাস পেয়েছে। আলোচনায় শ্রম সংস্কার, বাণিজ্য সুবিধা, রোহিঙ্গা সংকট এবং মার্কিন বাজারে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি) জন্য বাংলাদেশের যোগ্যতা নিয়েও আলোচনা হয়।

পাচারকৃত অর্থ ফেরত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জসিম বলেন, বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ এ বিষয়ে মার্কিন বিশেষজ্ঞ সহায়তা চাইতে পারে।

তিনি বলেন, 'আমরা সবেমাত্র অবৈধ তহবিল প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটা করতে সময় লাগবে।'

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'প্রতিনিধি দলকে শ্রম আইনের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তারা আমাদের উদ্যোগকে স্বীকার করেছে এবং এগুলোকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসাবে বর্ণনা করেছে।'

বাংলাদেশি পণ্যের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালুর বিষয়ে জসিম উল্লেখ করেন যে, জিএসপি সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।

নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব নিশ্চিত করেন যে, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি সংকটের মূল কারণগুলোকে মোকাবিলায় বাংলাদেশের গুরুত্ব আরোপের ওপর জোর দেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধিদল সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব স্পষ্ট করে বলেন যে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের উদ্বেগ দ্বিপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমাধান করে।

তিনি জানান, এই বৈঠকে এ ধরনের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে (ইউএনজিএ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব ব্যাখ্যা করে বলেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউএনজিএতে উপস্থিত থাকার সময় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন না। তবে যাই হোক, একটি অভ্যর্থনা হতে পারে এবং তাদের সময়সূচি একই হলে তারা দেখা করার সুযোগ পেতে পারেন।

এর আগে সকালে সফররত প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাস বলেছে, 'আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

সকালে একই স্থানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রতিনিধি দল।

বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় 'দ্য ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ গ্রান্ট এগ্রিমেন্টের (ডিওএজি)' ৬ষ্ঠ সংশোধনীতে সই করেছে।

আজকের সংশোধনীর অধীনে ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে তার তিনটি খাতে সুশাসন, সামাজিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ এবং স্থিতিস্থাপকতার জন্য ২০২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব একেএম শাহাবুদ্দিন এবং ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড জে. এশলিম্যান স্ব স্ব পক্ষে সই করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

38m ago