ব্যাংকের সংখ্যা ৩০টিতে নামিয়ে আনতে হবে: অধ্যাপক মইনুল ইসলাম

সিজিএসের আলোচনা সভায় (বা থেকে) অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ, জিল্লুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, আমলাদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে সবখাতের দুর্নীতির ইতি ঘটাতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আয়োজিত 'গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ' আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

আজ শনিবার চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে আয়োজিত সংলাপে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম এবং সংসদ বিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী সংগঠক, সেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের মতামত জানান।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, 'গত ১৫ বছর ধরে দেশ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। শেখ হাসিনার আত্মীয়-স্বজন ও তার পৃষ্ঠপোষকতা যারা করতো তারাই লুটপাটের উৎসব চালিয়েছে। ব্যাংকখাত থেকে শুরু করে সবখাতেই দুর্নীতি হয়েছে।'

তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'একটি দেশে কেন ৬১টি ব্যাংক দেওয়া হলো? কোন বিবেচনায় কারা এই ব্যাংকের মালিকানা পেলো? যারা এই ব্যাংকের মালিক হয়েছেন তারা সবাই শেখ হাসিনার আত্মীয়। কীভাবে এস আলম একা সাতটি ব্যাংকের মালিকানা পেলো?'

তিনি বলেন, 'একটি দেশে এত ব্যাংকের দরকার নেই। ব্যাংকের সংখ্যা ৩০টির মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি নিয়ে যদি বলি, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র সাবেক সরকারের সবচেয়ে বড় সাদা হাতি। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, আমরা ভুলে গেছি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপিও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। দুর্নীতির এই ধারা একদিনে তৈরি হয়নি।'

সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক মইনুল বলেন, 'রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও ভোটের মাধ্যমে হওয়া কাম্য।'

এই প্রসঙ্গে তিনি ফরাসি সংবিধানের উদাহরণ দেন। তিনি সংবিধানকে দ্বিকক্ষীয় কাঠামোতে রূপান্তর করার পরামর্শ দেন এবং সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের কথা উল্লেখ করেন।

তার মতে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি সব থেকে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করেছে।

অধ্যাপক মইনুল দুদককে সংস্কার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার দাবি জানান। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা গেলে সংস্কারের অনেকটা পথ আগানো যাবে বলে তিনি যোগ করেন।

অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ সংবিধান পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, 'মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করার মাধ্যমে সংবিধানের সংস্কার করা সম্ভব। কারণ, নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের মধ্যে পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। কাজেই নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলে সব ব্যবস্থার সংস্কার হওয়া সম্ভব।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়ানোর কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার আদিবাসী গোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব করে একজন তার মতামত রাখেন। তিনি পার্বত্য জেলার মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো তদন্ত না হওয়ায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, 'শান্তিচুক্তির ২৫ বছর হলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি।'

জিল্লুর রহমান বলেন, 'ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান না হলেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শেষ সরকার ব্যর্থ হতে পারে, তবে এটি সামগ্রিকভাবে জাতির ব্যর্থতা না।'

তিনি জনগণকে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে আশাবাদী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে অনুরোধ জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

26m ago