‘ফিনিক্স পাখির মতো আবারও জেগে উঠবে হামাস’

ইসরায়েলের দাবি, হামাসের এখন আর আগের মতো সুসংহত সামরিক অবকাঠামো নেই। তারা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল হাতে নিয়েছে।
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল। ছবি: রয়টার্স
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সঙ্গে বছরব্যাপী যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের। তা সত্ত্বেও, রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো আবারও জেগে উঠবে হামাস। এমনটাই বলেছেন স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা হামাস নেতা খালেদ মেশাল। 

আজ সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছ। কাতারের রাজধানী দোহায় রয়টার্সকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন মেশাল।

মেশাল জানান, নতুন যোদ্ধা নিয়োগ ও অস্ত্র উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে হামাস।

মেশাল মত দেন, গাজার চলমান সংঘাত এক বছর ধরে চললেও এটি ৭৬ বছরের বৃহত্তর সংঘাতেরই অংশ। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং ইসরায়েলের জন্ম হয়। সে সময়টি ফিলিস্তিনিদের কাছে 'মহা দুর্যোগ' বা 'নাকবা' নামে পরিচিত।

এ মুহূর্তে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের পর মেশাল (৬৮) সংগঠনটির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম।

'আমরা এমন কিছু পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাই, যখন অনেকেই শহীদ হন এবং আমাদের সামরিক সক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু ফিলিস্তিনি চেতনা আবার জেগে ওঠে। ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো আমরাও আবারও জেগে উঠি। আল্লাহ মেহেরবান', যোগ করেন তিনি। 

১৯৯৭ সালে মেশালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা চালায় ইসরায়েল। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত হামাস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেশাল।

ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজার খান ইউনিসের ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজার খান ইউনিসের ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স

তিনি মত দেন, এখনও ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অতর্কিতে হামলা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে হামাসের। 

সোমবার সকালে ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে হামাস। তবে সবগুলোই প্রতিহত করেছে ইসরায়েল। 

মেশাল বলেন, 'আমাদের গোলাবারুদ ও অস্ত্রের মজুদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু হামাস এখনো তরুণ যোদ্ধাদের নিয়োগ দিচ্ছে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে'

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলেন, মেশাল এখনো হামাসের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং তার এই বক্তব্যে এটাই ইঙ্গিত করছে যে ক্ষতির শিকার হলেও হামাস যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক জুস্ট আর হিল্টারমান বলেন, 'সার্বিকভাবে আমি বলতে পারি, (হামাস) ভালোভাবেই টিকে আছে এবং খুব সম্ভবত তারা আগামীতে কোনো এক সময় বীরদর্পে গাজায় ফিরে আসবে।'

তিনি আরও জানান, যুদ্ধ শেষে গাজার ভাগ্যে কি আছ, সে বিষয়ে ইসরায়েলের কোনো পরিকল্পনা নেই। যার ফলে, হামাস আবারও ফিরে আসতে পারে। তবে তাদের হয়তো আগের মতো শক্তিমত্তা থাকবে না।

মেশালের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার জানায়। 

ইসরায়েলের দাবি, হামাসের এখন আর আগের মতো সুসংহত সামরিক অবকাঠামো নেই। তারা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল হাতে নিয়েছে।

তারা আরও দাবি করেছে, গাজায় মোট নিহতের প্রায় এক তৃতীয়াংশ, বা ১৭ হাজার মানুষ হামাস যোদ্ধা ছিলেন। এক বছরের যুদ্ধে ইসরায়েল ৩৫০ সেনা হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। সেদিনই এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জন হামাসের হাতে আটক হন। এরপর থেকে নির্বিচার ও গণহত্যামূলক পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলা মোট নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার।

মেশাল বলেন, যতদিন নেতানিয়াহুর সরকার ক্ষমতায় আছে, ততদিন এ অঞ্চলে শান্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।

'যতদিন ইসরায়েলি অধিগ্রহণ অব্যাহত থাকবে, ততদিন এ অঞ্চলটি একটি টাইম বোমা হয়ে থাকবে', বলেন মেশাল।

Comments

The Daily Star  | English

9 die of dengue

Highest single-day deaths this year

59m ago