বাংলাদেশের মাথায় যখন প্রতিপক্ষের লেজ
একটা ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম সাত ব্যাটারের কেউ একজন ৫০ রান করলেন। একই দলের শেষ চার ব্যাটারের কোনো একজনের থেকেও সমান রান এলো। ইনিংস দুটির মধ্যে কোনটি বোলিং দলকে বেশি বিরক্ত করবে বলে মনে হয়?
এই প্রশ্নের ভালো উত্তর দিতে পারেন বাংলাদেশের বোলাররা। ইদানিং লেজের ব্যাটারদের বিরুদ্ধে টাইগারদের বোলিং আক্রমণ যে ভোগান্তিতে পড়ে যাচ্ছে নিয়মিতই।
যেটির সর্বশেষ উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে বাংলাদেশের টেস্ট। যেখানে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের শুরুর ছয় ব্যাটার মিলে ৯৭ রান করেছেন। এদিকে সফরকারীদের শেষ চার ব্যাটার এনেছেন এর থেকে মাত্র ৯ রান কম।
গত দুই বছরে ৮ থেকে ১১ নাম্বার ব্যাটারদের সম্মিলিত গড় যে দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি, সেটি লাল বলের বাংলাদেশই। একমাত্র টাইগারদের বোলিংয়ের মুখোমুখি হয়েই প্রতিপক্ষের শেষ চার ব্যাটার মিলে বিশের অধিক গড়ে (২৩.৩১) রান তুলেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় (১৭.৫৩) ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে।
কিছু কিছু দলের অবশ্য আট নাম্বারে অলরাউন্ডার খেলে থাকেন। এই পজিশনের ব্যাটার হিসেবে বাংলাদেশ যেমন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিসকে পেয়েছে। নাজমুল হাসান শান্তর দলকে হজম করতে হয়েছে তাদের দুজনেরই সেঞ্চুরি।
অনেক সময় টিকে থাকা পুরোদস্তুর ব্যাটারকে খেলতে হয় লেজের ব্যাটারদের নিয়ে। তখন সেট ব্যাটারকে একপাশে রেখে লেজের ব্যাটারদের আউট করতে পারা- সেটিও এক দক্ষতা বটে। এই কাজে বাংলাদেশি বোলারদের ব্যর্থ হতেই দেখা যাচ্ছে বারংবার৷
গেল দুই বছরে তাইজুল ইসলামদের বিপক্ষে শেষ চার উইকেটের জুটি ৫০ রানের বড় হয়েছে ১৫ বার। তাদের চেয়ে বেশি এমন জুটিতে ভুগেছে শুধু ইংল্যান্ড। সপ্তম থেকে দশম উইকেট জুটিতে বেন স্টোকসের দলের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ অন্তত ৫০ রান করেছে ২০ বার।
অবশ্য সাদা পোশাকে ইংলিশরা এই সময়ে ম্যাচ খেলেছে ২৪টি। আর বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা মোটে ১৩। অর্থাৎ বলা চলে, গড়ে প্রতি ম্যাচেই ইনিংসের শেষভাগের জুটি বিপদে ফেলেছে বাংলাদেশকে।
এমনকি টাইগারদের শক্ত অবস্থানও নড়বড়ে হয়েছে এতে। শতরানের যে চারটি জুটি হয়েছে, তার সবকটিই সপ্তম উইকেটে। প্রত্যেকবারই ১৫০ রানের কমে ৬ উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ।
মিরপুর টেস্টে কাইল ভেরেইনা ও উইয়ান মুল্ডারের ১১৯ রানের জুটি এর মধ্যে একটি। এর আগেই ভারত সফরে অশ্বিন ও রবিন্দ্র জাদেজা মিলে গড়েছিলেন ১৯৯ রানের জুটি। চলতি বছরেই শ্রীলঙ্কার ধনঞ্জয়া দি সিলভা ও কামিন্দুর জুটিতে এসেছিল ১৭৩ রান। গত বছর আয়ারল্যান্ডের অ্যান্ডি মেকব্রাইন ও লরকান টাকার করেছিলেন ১১১ রানের পার্টনারশিপ।
এছাড়া চারবার প্রতিপক্ষ পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের পার্টনারশিপ গড়েছে যখন, তাদের রান ১০০ হওয়ার আগেই ছয় অথবা সাত উইকেট নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
২০২২ সালে অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ারের মিরপুরে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়া অষ্টম উইকেটে সেই ৭১ রানের জুটি। গেল বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই ম্যাচে দুবার- গ্লেন ফিলিপস প্রথমে মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে গড়েন সপ্তম উইকেটে ৭০ রানের জুটি। পরের ইনিংসে টিম সাউদি তাকে সঙ্গ দেন নবম উইকেটে ৫৫ রানের জুটিতে। চলতি বছর রাওয়ালপিন্ডিতে সপ্তম উইকেটে আঘা সালমান ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে বাংলাদেশ দেখেছে ৫৫ রানের পার্টনারশিপ৷
বোলিং দলের যত মাথা ব্যথা, তা প্রতিপক্ষের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের নিয়েই থাকার কথা। তাই বলে তাদের উইকেট নিলেই কাজ শেষ, এমনটা ভেবে নিলে সেটি ভুল প্রমাণিত হতে পারে। বাংলাদেশ কি সে ভুলটাই করে যাচ্ছে?
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাসান মাহমুদ জানালেন, 'অবশ্যই লেজের ব্যাটারদের রানগুলোও ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উইকেটও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারদের যে পরিকল্পনায় বল করা হয়, ওদেরও একইভাবে বোলিং করা হয়। কিন্তু হয়ে যায়, একেক সময় ওরা রান করে ফেলে। আমরা চেষ্টা করতেছি, কিন্তু হচ্ছে না। চেষ্টা ছাড়া যাবে না।'
বাংলাদেশের মতো দলের সমস্যার ঘর কখনো খালি হওয়ার নয়। তবে যাদের ব্যাটিং নিয়ে সবচেয়ে কম পরিকল্পনা করে থাকবে কোনো একটা দল, তারাই তো এখন বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের মাথা ব্যথা।
Comments