পাটের দাম বাড়লেও খুশি না কৃষক, চড়া বাজারে লাভ ব্যবসায়ীর

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বড়বাড়ী হাটে মহাজনদের কাছে পাট বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা | ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

অন্তর্বর্তী সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে বাজারে বেড়েছে পাটের চাহিদা। সেই সঙ্গে বেড়েছে পাটের দাম। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরের কয়েকটি বাজারে গত দুই সপ্তাহে মণ প্রতি পাটের দাম বেড়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত।

এসব বাজারে বর্তমানে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে।

পাটের দাম হঠাৎ বাড়লেও খুশি না কৃষক। তারা বলছেন, এতে লাভবান হবে ব্যবসায়ীরা।

এই তিনটি জেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। তারা জানিয়েছেন, অধিকাংশ কৃষক আগেরই উৎপাদিত পাট বিক্রি করে দিয়েছেন। সে সময় পাটের দাম ছিল প্রতি মণ পাট দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

বাড়তি লাভের অর্থ পাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মহাজন।

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বড়বাড়ী হাটে কথা হয় পাট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় এক মাস আগেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করেছেন। আনুমানিক আট থেকে ১০ শতাংশ কৃষকের ঘরে সামান্য কিছু পাট সংরক্ষিত আছে।'

আলতাফ বলেন, 'যারা পাট ঘরে রেখেছিলেন, তারা এখন বাড়তি দাম পাচ্ছেন। মূলত যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে গুদামজাত করেছিলেন, তারাই এখন বাজারে পাট বিক্রি করছেন।'

দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে মোট ১০০ মণ পাট কিনে গুদামে রেখেছিলেন বলে জানান আলতাফ।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটের মহাজন সুনীল চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণার পরেই বড় কোম্পানিগুলো বেশি দরে পাট কিনতে শুরু করেছে। পাটের চাহিদা বাড়ায় আমরা স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট কিনছি। তারাও সরাসরি কোম্পানিগুলোতে পাট বিক্রি করছেন।'

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের কৃষক নুরু মিয়া জানান, তিনি এ বছর ছয় বিঘা জমিতে ৪৯ মণ পাট উৎপাদন করেছিলেন। প্রতি মণ পাট উৎপাদনে তার খরচ হয়েছিল দুই হাজার ৩০০ টাকা। একমাস আগে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে তিনি ৪৪ মণ পাট বিক্রি করেছেন, ঘরে রেখেছেন পাঁচ মণ পাট।

তিনি বলেন, 'পাটচাষ এখন আর লাভজনক না। আমরা কেবল পাটকাঠির জন্য চাষ করি। যখন বাজারে পাটের দাম বাড়লো, তখন আমাদের ঘরে বিক্রির জন্য পাট নেই। পাটের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন।'

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামের কৃষক সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ হয় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমিতে পাওয়া যায় আট থেকে ১০ মণ পাট। বিক্রি করতে গেলে সে অনুযায়ী লাভ হয় না। যে কারণে পাটচাষ অনেক কমে গেছে।'

এক যুগ আগেও সন্তোষ ১২ থেকে ১৫ বিঘা জমিতে পাটচাষ করতেন। এখন তিন থেকে চার বিঘা জমিতে পাটচাষ করেন। বাড়িতে পাট ও পাটকাঠির প্রয়োজন হয়। সেই কারণে তিনি পাটচাষ ধরে রেখেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৯০ হাজার কৃষক পাটচাষ করেন।

এ বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা—কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারিতে ৫০ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৭৩৩ মেট্রিক টন পাট।

পাট উন্নয়ন অফিসার তৈয়বুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কৃষকদের একসঙ্গে সব পাট বিক্রি করতে নিরুৎসাহিত করি। কিন্তু টাকার প্রয়োজনে তারা উৎপাদিত সব পাট একসঙ্গে বিক্রি করেন। যারা কিছু পাট বাড়িতে রেখেছিলেন, তারা এখন বেশি দর পাচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়তে থাকলে আগামীতে পাটের দাম আরও বাড়বে এবং কৃষক লাভবান হবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

COP29 and the stakes for Bangladesh

The distribution of benefits is unequal between buyers and sellers.

3h ago