মধ্যপাড়ায় বাড়ছে অবিক্রীত পাথরের মজুত, সংকটে এমজিএমসিএল

মধ্যপাড়ার পাথর
এমজিএমসিএল ইয়ার্ডে অবিক্রীত পাথরের মজুত। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

অবকাঠামো উন্নয়নে পাথরের প্রচুর চাহিদা থাকলেও, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ইয়ার্ডে অবিক্রীত পাথরের মজুত ক্রমেই বাড়ছে।

সরকারি ও বেসরকারি খাতে পাথরের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিপণন উদ্যোগের অভাব, সরকারি প্রতিষ্ঠানটির উত্তোলিত পাথরের ব্যবহারের উদাসীনতা ও কম দামে পাথর আমদানি করাকে দায়ী করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন—রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার অধীনে থাকা পাথর খনিটি বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে আছে। এর ইয়ার্ডে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ১০ লাখ টনেরও বেশি অবিক্রীত পাথর আছে। এটি সংরক্ষণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।

গত ফেব্রুয়ারিতে পাথর রাখার জায়গার অভাব হওয়ায় প্রায় ৩৫ হাজার টন পাথর উৎপাদন স্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কর্মীদের আবাসিক এলাকায় রাখা হয়েছে।

জায়গা না থাকায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে এমজিএমসিএল কর্তৃপক্ষ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার চিঠি দেয় খনির নিয়োগকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)।

জিটিসি প্রতিদিন প্রায় গড়ে পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন করে। তবে বিক্রি একেবারেই নগণ্য। পরে বিক্রি কিছুটা বাড়লে এবং পাথর রাখার জায়গার ব্যবস্থা করে আংশিক উৎপাদন আবার শুরু হয় প্রায় দুই মাস পর।

তবে, বিক্রি কম থাকায় আবারও পাথর রাখার জায়গার সংকটে পরে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতি মাসে যেখানে উৎপাদন প্রায় এক দশমিক দুই লাখ টন, সেখানে গড় বিক্রি মাত্র ৫০ হাজার টন হওয়ায় ফলে অবিক্রীত পাথরের মজুত বেড়েই চলেছে।

মধ্যপাড়ার পাথর
ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

যদিও সেপ্টেম্বরে বিক্রি ছিল এক দশমিক দুই লাখ টন।

তারপরও বিক্রি বাড়াতে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে খনি কর্তৃপক্ষ।

এমজিএমসিএল দেশব্যাপী বড় বড় সরকারি ও বেসরকারি খাতে তাদের পাথর ব্যবহারে উৎসাহিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছে যাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাথর ব্যবহারে সবাই আগ্রহী হয়। তবে এগুলোর কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত বিক্রি বাড়াতে পারেনি।

এমজিএমসিএল বিভিন্ন আকারে পাথর উত্তোলন করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতি বছর রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণে এমজিএমসিএলের পাথর ব্যবহার করে। সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংস্থা অন্য উৎস থেকে পাথর নেওয়ায় এমজিএমসিএলের বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা মাসিক খরচ ও জিটিসি কর্মীদের বেতন পরিশোধে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

দেশে পাথরের চাহিদা বাড়লেও এমজিএমসিএলের বিক্রি সেই অনুপাতে বাড়েনি। এক দশক আগে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১০ মিলিয়ন টন ছিল। বর্তমানে চাহিদা প্রায় ২২ মিলিয়ন টন। এত বড় বাজার থাকা সত্ত্বেও এমজিএমসিএল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে পর্যাপ্ত পাথর থাকলেও পাথর আমদানিতে প্রচুর ডলার খরচ হচ্ছে। এমজিএমসিএল বর্তমানে আর্থিক সংকটে আছে। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অবিক্রীত পাথর স্টকইয়ার্ডে জমে আছে।'

এমজিএমসিএল কর্তৃপক্ষ চায় আমদানিকৃত পাথরের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হোক। এর গুণগত মান ও পরিমাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার আরও কঠোর হোক।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্তে দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি খাতে ৫০ শতাংশ স্থানীয় খনির পাথর ব্যবহারের বিধান রাখায় এমজিএমসিএলের বিক্রি সেই সময়ে বেড়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English
Graft allegations against Benazir Ahmed

Interpol issues red notice against ex-IGP Benazir

Authorities have so far submitted red notices requests against 12 individuals, including several high-ranking officials of the AL regime

31m ago