কমলা না ট্রাম্প: হোয়াইট হাউসে কাকে দেখতে চায় রাশিয়া

কমলা হ্যারিস, ভ্লাদিমির ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হন, তখন ক্রেমলিনে শ্যাম্পেন উদযাপন শুরু হয়। এরপর ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এবারও একই অভিযোগ আছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে 'ভালো সম্পর্ক' থাকলেও চলতি নির্বাচনের আগে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার সেই সমর্থনও ট্রাম্পকে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে ক্রেমলিন আসলে কী চায়?

মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানাচ্ছে, ট্রাম্প বা কমলা, কোনো প্রার্থীই মস্কোপন্থী হতে যাচ্ছেন না। কোনো প্রার্থীই রাশিয়ার ওপর চলমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে তা থেকে সুবিধা নেবে মস্কো।

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, 'এই নির্বাচন রাশিয়ার জন্য কোনো পরিবর্তন আনবে না। কারণ দুই প্রার্থীই আমাদের পরাজিত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।' 

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের কণ্ঠেও একই সুর। রুশ বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে লাভরভ বলেন, 'নির্বাচনে যে-ই জিতুক না কেন, মার্কিনিদের রাশিয়াবিদ্বেষী নীতি ও মনোভাব পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখি না।'

ট্রাম্প যদি জেতে

রাশিয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প অনেকবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় যাওয়ামাত্রই থেমে যাবে ইউক্রেন যুদ্ধ। তার সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও অনেকবার বলেছেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হবে ইউক্রেন। সেটা রাশিয়ার জন্য জয় বলেই বিবেচিত হবে। ইউক্রেনের অধিকৃত ভূমি তখন রাশিয়ার দখলেই থেকে যাবে।

তবে ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও এ বিষয়ে সতর্ক ক্রেমলিন। পশ্চিমা মিত্রদের চাপে শেষ পর্যন্ত এই পদক্ষেপ নাও নিতে পারেন তিনি।

পলিটিকো জানায়, ২০১৬ নির্বাচনের আগেও ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার। যেটি শেষ পর্যন্ত পূরণ করেননি তিনি।

মেদভেদেভও বিশ্বাস করেন, এ যুদ্ধ থামাতে পারবেন না ট্রাম্প।

'তিনি (ট্রাম্প) যুদ্ধ থামাতে পারবেন না। একদিনে, তিনদিনে, এমনকি তিন মাসেও পারবেন না। তিনি যদি আসলেই চেষ্টা করেন, তাহলে নতুন কেনেডি হিসেবে দেখা হবে তাকে,' বলেন মেদভেদেভ।

গত মাসে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, মস্কো ও বেইজিংয়ের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সম্মত হওয়ার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তিনি। তার এই দাবিও সরাসরি অস্বীকার করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ।

তবে ট্রাম্প নির্বাচন থেকে শুরু করে সার্বিক মার্কিন ব্যবস্থা নিয়ে যে অনাস্থা ছড়িয়েছেন তার সমর্থকদের মাঝে, সেটি ক্রেমলিনের পক্ষে কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কমলা যদি জেতে

গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন পুতিন। তবে তার সেই সমর্থন ব্যঙ্গাত্মক ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিই ধরে রাখবেন কমলা। অব্যাহত রাখবেন মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা। সেটিও ক্রেমলিনের জন্য খারাপ হবে না বলে ধারণা করছেন সাবেক সোভিয়েত প্রিমিয়ার নিকিতা ক্রুশ্চেভের নাতনি নিনা ক্রুশ্চেভা।

বর্তমানে নিউইয়র্কের দ্য নিউ স্কুলের অধ্যাপক নিনা পলিটিকোকে বলেন, 'ইউক্রেন যুদ্ধকে তার সবচেয়ে বড় লিগ্যাসি হিসেবে দেখছেন পুতিন। তাই এই যুদ্ধকে যতদিন সম্ভব চালিয়ে নিতে চান।'

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলোও এখন মস্কোকে উপকৃত করছে বলে দাবি করেন নিনা। মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের যে বক্তব্য, সেটি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। গত মাসের কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে পশ্চিমাবিরোধী একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলারও ডাক দিয়েছেন পুতিন।

২০২৪-এর নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব

পলিটিকো জানায়, ঢালাওভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দিলেও এই নির্বাচন নিয়ে চুপিসারে কাজ করে যাচ্ছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে অপতথ্য প্রচার, ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও প্রচারের মতো অনেকরকম 'ষড়যন্ত্রের' অভিযোগ এনেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রযুক্তিবিদরা।

এসব অপতথ্যের সিংহভাগই ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের উদ্দেশ্য করে ছড়ানো হয়েছে। পলিটিকোর মতে, মার্কিন জনগণের মাঝে ভোটের প্রতি অনাস্থা বাড়ানোর জন্যই এসব প্রচারণা চালিয়েছে মস্কো।

রুশ গণমাধ্যম এই নির্বাচনকে সার্কাস বা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না করে এই নির্বাচনকে ঘিরেও ২০২০ সালের মতো অস্থিরতা তৈরি হোক, সেটাই হয়তো চাইবে ক্রেমলিন।

Comments

The Daily Star  | English
narcotics cases pending despite deadline

4.8 lakh narcotics cases pending despite deadline

Judge shortage, lack of witnesses, inadequate court infrastructure blamed for delays

7h ago