চট্টগ্রাম ওয়াসাকে অবশ্যই সিস্টেম লস কমাতে হবে

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ওয়াসার সার্বিক কর্মদক্ষতা নিয়ে আমরা অত্যন্ত হতাশ। গত এক দশকে এই সংস্থা তাদের সেবার মানোন্নয়নে হাজারো কোটি টাকা খরচ করলেও এতে সাফল্যের পরিমাণ খুবই সামান্য।

একাধিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত এক দশকে সংস্থাটির সিস্টেম লস বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যা ছিল ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, তা গত অর্থবছরে বেড়ে ৩০ শতাংশে হয়েছে। যার ফলে, বড় আকারে রাজস্ব হারিয়েছে এই সংস্থাটি। বর্তমানে পদ্ধতিগত অদক্ষতার কারণে বছরে ১০০ কোটি টাকা হারাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক। অনেক গ্রাহক প্রকৃতপক্ষে যতখানি পানির সরবরাহ পাচ্ছেন বা ব্যবহার করছেন, তার চেয়ে বেশি পানির জন্য তাদেরকে বিল করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উৎপাদনের পর যেটুকু পানির কোনো হদিস পাওয়া যায় না, সেটাকেই মূলত সিস্টেম লস বা নন-রেভিনিউ ওয়াটার (এনআরডব্লিউ) বলা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, সংস্থাটি ২০২৩-২৪ সালে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫১১ মিলিয়ন পানি উৎপাদন করলেও রাজস্ব আয় হারিয়েছে ৫২ হাজার ৯৬২ মিলিয়ন লিটার। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে ১৯ দশমিক ৩৭ টাকা গড় শুল্কসহ, সংস্থাটি সম্ভাব্য রাজস্ব হারিয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এই তথ্য থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে: অন্য তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত পানি সরবরাহ সংস্থার তুলনায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম লস কেন এত বেশি? পাইপলাইনে লিকেজ, অবৈধ সংযোগ ও মিটারিংয়ে ত্রুটিকে এই চরম অদক্ষতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। ভোক্তা ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, মিটারিং পদ্ধতির কারসাজি করে ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মী পানি চুরি করছে, যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে।

২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরও চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি চুরির জন্য দায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। এসব প্রকল্পের মোট খরচ হয় প্রায় ছয় হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। যার ফলে, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি অপচয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক সরাসরি প্রভাবিত হন। পাশাপাশি, ন্যুনতম বিলিং পদ্ধতি গ্রাহকদের পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বাড়িতে যদি সপ্তাহে এক দিনও পানি সরবরাহ করা হয়, তা সত্ত্বেও তাদেরকে এই পদ্ধতির আওতায় মাসে ন্যুনতম প্রায় ৬০০ টাকা বিল দিতে হয়। কিন্তু কেন গ্রাহকরা ওয়াসার অদক্ষতার ভার বহন করবেন?

এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো শিগগির সমাধান করার জন্য আমরা চট্টগ্রাম ওয়াসাকে অনুরোধ করছি। এই সংস্থাটিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সিস্টেম লস কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রকৃত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পানি চুরি ও মিটারিং কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। এ ধরনের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারলে চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য আকারে বাড়বে। চট্টগ্রামের মানুষ যাতে আর কখনো এ ধরনের ভয়াবহ পানি স্বল্পতায় না ভোগে, সেটাও এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।  

Comments

The Daily Star  | English
special security for foreign investors in Bangladesh

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

3h ago