ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি শুরু, ১৪ মাসের সংঘাতের অবসান

দক্ষিণ লেবাননের নাবাতিয়েহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার পরের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ লেবাননের নাবাতিয়েহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার পরের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অবশেষে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে বিরতি দিয়েছে ইসরায়েল। যার ফলে, আপাতত অবসান ঘটেছে ১৪ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েল গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। 

যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

যা আছে চুক্তিতে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

চুক্তি অনুযায়ী, ৬০ দিনের অন্তর্বর্তী সময়সীমার মধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। সেখানে লেবাননের সরকারি বাহিনী পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করবে। লিটানি নদীর দক্ষিণে তারা অবস্থান নেবেন। এর মধ্যে থাকছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের ৩৩টি চৌকি।

হিজবুল্লাহর সদস্যরা দক্ষিণ লেবানন ছেড়ে যাবে এবং সেখান থেকে তাদের সব সামরিক অবকাঠামো সরিয়ে ফেলা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র মূল চুক্তির পাশাপাশি আলাদা করে একটি চিঠি যুক্ত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে ইসরায়েলের পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। সেদিনই এই হামলার পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল, যার মাধ্যমে গাজার যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।

হামাসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেদিন থেকেই ইসরায়েল সীমান্তে হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। তাদের এসব হামলার ফলে ৬০ হাজার ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সেপ্টেম্বরে লেবাননে আকাশ ও স্থল হামলার তীব্রতা বাড়ায় ইসরায়েল। ইসরায়েলের হাতে হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ শীর্ষ নেতার মৃত্যু হয়েছে। নিহত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার ৭০০ মানুষ।

দক্ষিণ লেবানন এখনো নিরাপদ নয়

আইডিএফের আরবিভাষী মুখপাত্র আভিচে আদ্রাই। ছবি: এক্স থেকে সংগৃহীত
আইডিএফের আরবিভাষী মুখপাত্র আভিচে আদ্রাই। ছবি: এক্স থেকে সংগৃহীত

আইডিএফের আরবিভাষী মুখপাত্র আভিচে আদ্রাই হুশিয়ারি দেন, যুদ্ধবিরতি চালু হলেও এখনো দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে বেসামরিক ব্যক্তিদের ফিরে আসা নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, 'যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে এবং এর শর্ত অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন অংশে এখনো আইডিএফের সেনারা অবস্থান করছে'।

'আইডিএফ যেসব গ্রাম ছেড়ে গেছে, সেখানে ফিরে যাবেন না। ওই এলাকায় আইডিএফের সদস্যদের দিকে এগিয়ে যাবেন না। আপনাদের নিজেদের ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে ওইসব এলাকায় যাবেন না', যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'যখন নিরাপদে ফিরে যাওয়ার সময় হবে, আমরা আপনাদেরকে তা জানাব।'

বাইডেনের 'বিরল' অর্জন 

হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বক্তব্য দেন বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বক্তব্য দেন বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মঙ্গলবার বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বাস্তবায়ন হওয়া ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর যুদ্ধবিরতির 'ভালো খবরকে' স্বাগত জানান। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও গতি পাবে। 

এর আগে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তাদের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

হোয়াইট হাউসের রোস গার্ডেন থেকে বক্তব্য দেন বাইডেন। তিনি বলেন, 'আমার কাছে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কিছু ভালো খবর আছে'।

'আমি ইসরায়েল ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি, তাদের সরকার ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান ভয়াবহ সংঘাতের অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে।'

বাইডেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে 'এই মুহূর্তে পৌঁছাতে অংশীদারের ভূমিকা পালনের জন্য' ধন্যবাদ জানান।

বিশ্লেষকরা এ বিষয়টিকে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে বাইডেনের 'বিরল অর্জন' বলে অভিহিত করেন। আর দুই মাসেরও কম সময় পর হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাচ্ছেন বাইডেন। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতাগ্রহণ করবেন সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago