মানবদেহে মুরগির ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণে হতে পারে প্রাণঘাতী রোগ: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহে প্রবেশ করলে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও টাইফয়েডের মতো প্রাণনাশক নানা রোগ হতে পারে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) গবেষকদের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, সাধারণত ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগিতে পরিমিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু প্রান্তিক অনেক ব্যবসায়ী ও চাষী অনিয়ন্ত্রিতভাবে অনুমোদনহীন অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির খাদ্যে ব্যবহার করছেন। গবেষক দল ওই সব অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে নিরীক্ষা চালান। তারা নোয়াখালীর তিনটি প্রান্তিক অঞ্চলের ফার্ম থেকে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির অন্ত্রের নমুনা সংগ্রহ করেন। সেখানে তারা মুরগির অন্ত্রে ৯ ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন। এরমধ্যে মোরগানিলা মরগানি, এন্টারোভেক্টর এবং ওল্ফারথিমনাস কাইটিনিক্লেসটিকার মতো প্রাণঘাতী ব্যাক্টেরিয়া বিদ্যমান।

এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মুরগির অন্ত্রে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা যায়, ব্যাক্টেরিয়াগুলো ইতোমধ্যে বাজারে বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ৬৬ থেকে ১০০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। মানবরোগ সৃষ্টিকারী এই সব ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজে আসছে না।

নোবিপ্রবি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শিপন দাশ গুপ্ত, শুভ চন্দ্র দাস ও বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আদনান মুনিম এ গবেষণা পরিচালনা করেন।

গবেষক দলের প্রধান ড. শিপন দাশ গুপ্ত বলেন, 'মুরগির অন্ত্রে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও টাইফয়েডসহ নানা ব্যাক্টেরিয়া থাকে। আশঙ্কার বিষয় হলো সেগুলো প্রতিরোধে আমরা যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছি, তা এখন আর কাজ করছে না। কারণ ব্যাক্টেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কাজেই ব্যাক্টেরিয়া মুরগির শরীরেই রয়ে যাচ্ছে। আর এসব ব্যাক্টেরিয়া মুরগি কাটা বা ধোয়ার সময় যদি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও টাইফয়েডের নানা প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়াগুলো মানুষের কাটা বা ক্ষতস্থানের রক্তের সংস্পর্শে গেলে এ ব্যাক্টেরিয়া মানুষকে আক্রান্ত করবে।'

এসব ব্যাক্টেরিয়া দমনে বাজারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর প্রতিরোধী ক্ষমতা যাচাই করা হয়। সেখানে দেখা যায়, প্রায় সব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধেই মুরগীর শরীরে থাকা ব্যাক্টেরিয়াগুলো প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, এই সব মুরগির ব্যাক্টেরিয়াতে জীবাণু বিরোধী চতুর্থ প্রজন্মের সবশেষ অ্যান্টিবায়োটিক 'কলিস্টিন' এর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গবেষকদল মুরগির ব্যাক্টেরিয়াতে এইসব অ্যান্টিবায়োটিক বিরোধী দায়ী জিন শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিউ-১ র‌্যাংকড জার্নাল প্লজ ওয়ানে প্রকাশিত হয়। 

এ ছাড়াও ব্যাক্টেরিয়াগুলো মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করার সক্ষমতা রাখে কি না তা যাচাই করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানসহ অন্য একটি যৌথ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সেখানে তারা 'ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া' ব্যাক্টেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন করেন।

  

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

6h ago