পাশার দান উল্টে বাংলাদেশের ঘরে ডটের দুশ্চিন্তা

বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সদ্য সমাপ্ত সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ধারাভাষ্যে তখন ইয়ান বিশপ ও স্যার কার্টলি এমব্রোস। ক্যারিবিয়ানদের ক্রিকেটাঙ্গনে বহুল চর্চিত অতিরিক্ত ডটের প্রসঙ্গ উঠে এল তাদের আলোচনায়। অ্যামব্রোস বললেন, 'বছরের পর বছর ধরে বলে আসছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্ট্রাইক রোটেশনে উন্নতি করতে হবে।'

এ নিয়ে কথাবার্তা দুই দলের ২০২১ সালের ওয়ানডে সিরিজের সময়ও হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখনকার প্রধান কোচ ফিল সিমন্স তার দলের স্ট্রাইক রোটেশনে উন্নতি আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন। এবার আরেকটি বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের প্রতিপক্ষের ড্রেসিংরুমে তিনি। তবুও তার মাথা থেকে অতিরিক্ত ডটের চিন্তা এখনই সরে যাচ্ছে না।

সবশেষ সিরিজে যে পাশার দান উল্টে গেছে। সেন্ট কিটসে প্রতিটি ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বেশি ডট দিয়েছে বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচেই এদেশের ব্যাটাররা কমপক্ষে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বল ডট দিয়েছেন। যেটি শেষমেশ বড় প্রভাব রেখেছে সিরিজটিতে ৩-০ ব্যবধানের ফল নির্ধারণ করতে।

প্রথম ম্যাচে ১৫৫ বলে কোনো রান আনতে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে শাই হোপের দল যে ২৮৭ বল খেলেছে, তাতে তারা ডট দিয়েছেন ১৪২টি। ম্যাচশেষে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছিলেন, আরও ২০ রান দরকার ছিল। সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বেশি বাউন্ডারি কিন্তু মেরেছিল এই অলরাউন্ডারের দল, তারপরও পর্যাপ্ত রান করতে না পারার পেছনে অতিরিক্ত ডটকেই দায় দিতে হয়।

দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৪ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। তবুও ৬২.৯১ শতাংশ বল ডট দেওয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে উপায় নেই! টাইগার অধিনায়ক মিরাজের যেখানে মনে হয়েছে ৩০০ রানের দরকার ছিল তাদের, সেখানে ২২৭ রান করার ক্ষেত্রে ২৭৫ বলের মধ্যে ১৭৩টি ডট দিয়েছেন বাংলাদেশিরা। ৯২ বল খেলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এনেছেন ৬২ রান।

সিরিজের শেষ ম্যাচে ৩২১ রানের পুঁজি গড়তে সমর্থ হয়েছিলেন সফরকারীরা। যদিও ডটের হার কমেনি সে ম্যাচেও। ইনিংসের অর্ধেক বলই রান ছাড়া পার করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ দশ ওভারে রিয়াদ ও জাকের আলীর হিটিং এবং প্রতিপক্ষের ছন্নছাড়া বোলিংয়ের সুবাদে লড়াকু সংগ্রহ এসেছে। তার আগে প্রথম ৪০ ওভারে শতকরা ৫৭ ভাগ বলে কোনো রান আসেনি।

৩২২ রানের লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫.৫ ওভারেই পেরিয়ে যাওয়ার পেছনে দুটি ক্যাচ মিস ও বোলারদের দায় বর্তায় নিঃসন্দেহে। স্বাগতিকরা টাইগারদের বোলিংয়ের বিপক্ষে নিয়মিত স্ট্রাইক বদল করতে পেরেছেন। ৮৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেললেও হোপের দলের ডট পার্সেন্টেজ ছিল মাত্র ৪২.১৮।

এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাউন্ডারি মারার দক্ষতা সকলেরই জানা। তাদের শক্তির জায়গাকে বাংলাদেশের একটি দুর্বলতা ভাবা হয়। অভাবনীয় ব্যাপার হচ্ছে, এই সিরিজে বাউন্ডারি সংখ্যা বিবেচনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায় বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল!

প্রথম ম্যাচে হোপদের ৩৪ বাউন্ডারির বিপরীতে মিরাজ-জাকেররা মেরেছেন ৩৫টি চার-ছক্কা। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশিদের ব্যাটে সীমানা পার হয়েছে ৪০ বার। আর ক্যারিবিয়ানরা তা করতে পেরেছেন ৩৮টি বলে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ২২৭ রানের প্রথম ইনিংসেই কার্যত ফল লেখা হয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্নার পার্কে সেদিন বাংলাদেশের ২৬ বাউন্ডারির জবাবে ২৯টি ছক্কা-চার মেরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা।

সব ম্যাচেই বাংলাদেশের চেয়ে কম বল খেলায় স্বাগতিকদের বাউন্ডারি পার্সেন্টেজ তুলনায় ভালো ছিল। তবে এ হিসাবে ক্যারিবিয়ানদের কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও যে ফল পক্ষে আসেনি, এ কারণেও অতিরিক্ত ডট নিয়ে হতাশা বেড়ে যেতে পারে সফরকারীদের।

নিয়মিত স্ট্রাইক বদল না করতে পারলে ব্যাটারের উপর চাপ যেমন বাড়ে, প্রতিপক্ষ বোলারদের ছন্দেও ব্যাঘাত ঘটানো সম্ভব হয় না বলে এটি গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো ড্যারেন স্যামি অধিনায়ক থাকাকালীন সেই ২০১১ সালে বলেছিলেন- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্ট্রাইক রোটেশনে ভালো করতেই হবে। এখন ক্যারিবিয়ানদের সাদা বলের প্রধান কোচের পরিচয় ধারণ করে তিনি সবশেষ সিরিজে দেখেছেন- প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো ডট পার্সেন্টেজ তার দলের। যা বাড়তি তৃপ্তিই দিবে দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে।

বেশি বেশি ডট দেওয়া- এদেশের ক্রিকেটে সমস্যার আলাপে সামনের সারিতে এটি থাকে টি-টোয়েন্টির বেলায়। ওয়ানডেতে তা নিয়মিত নয়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে যেমন 'অতিরিক্ত ডট' নামের অতিথির আনাগোনা চলে, বাংলাদেশের প্রধান কোচের ভূমিকায়ও এটি তার পিছু লেগে থাকুক, সেটি নিশ্চয়ই চাইবেন না চারশর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোচিং করানো সিমন্স।

Comments

The Daily Star  | English
eid-ul-azha emergency cases at pongu hospital

An Eid evening at Pongu Hospital: overflowing emergency, lingering waits

The hospital, formally known as NITOR, is a 1,000-bed tertiary medical facility that receives referral patients from all over the country

3h ago