মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে ৩০ হাজার বিদেশি, অধিকাংশ ভারত-চীনের

প্রতীকী ছবি

মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন অন্তত ৩০ হাজার বিদেশি। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভারত ও চীনের নাগরিক। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তারা এখনো মেয়াদ বাড়ানো বা নবায়নের জন্য আবেদন করেনি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) ভিসা শাখার সূত্রের কাছ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গত ৮ ডিসেম্বর বৈধ ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়, ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে বা নবায়ন না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত মাসে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বা নবায়ন করতে ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে।

তথ্য অনুসারে, মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে যেসব বিদেশিরা রয়েছেন তাদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ভারতীয় বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তাদের অধিকাংশই এখানে কর্মজীবী এবং বাকিরা শিক্ষার্থী।

গোয়েন্দা সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের অন্তত ৬০ শতাংশের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।'

অর্থাৎ, প্রায় ২৭ হাজার ভারতীয় নাগরিক মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডেটাবেস অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের মধ্যে চীনের নাগরিকরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার চীনা নাগরিক রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের ভিসার মেয়াদ শেষ।'

ডেটাবেস অনুযায়ী, প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন নাগরিক দেশে রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে অনেকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করছেন প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বিদেশি।

অন্যান্য বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাড়ে সাত হাজার, কানাডার সাড়ে চার হাজার, নেপালের সাড়ে তিন হাজার, রাশিয়ার সাড়ে চার হাজার, জাপানের সাড়ে চার হাজার, শ্রীলঙ্কার আড়াই হাজার, পাকিস্তানের দুই হাজার, ইতালির দুই হাজার, বেলারুশের ৫০০, ইন্দোনেশিয়ার ৫০০, ভুটানের ৩০০, পর্তুগালের ১৫০, ফিনল্যান্ডের ১০০ ও আর্জেন্টিনার ২২ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও, আরও অন্তত ১৭ হাজার ৯২৮ জন রয়েছেন অন্যান্য দেশের, যাদের অনেকেই আফ্রিকার দেশগুলো থেকে এসেছেন।

ভারতীয় ও চীনা নাগরিক ছাড়াও প্রায় এক হাজার ১৭ জন দক্ষিণ কোরিয়ার, ১৮৭ জন শ্রীলঙ্কার, ২৩১ জন যুক্তরাজ্যের, ৯৭ জন কানাডিয়ান ও ৪৬১ জন নাইজেরিয়ান নাগরিক ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

জরিমানা

ডিআইপির ভিসা শাখার তথ্য মতে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া এই বিদেশিদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে জরিমানা দিয়ে ভিসা নবায়ন করতে হবে কিংবা আইনি জটিলতার ঝুঁকি নিতে হবে।

আগে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থানের জন্য জরিমানা ছিল প্রতিদিন ২০০ টাকা, মাসিক ১০ হাজার টাকা এবং তিন মাস পর্যন্ত থাকার জন্য সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।

ডিআইপির পরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন) নাদিরা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৫ ডিসেম্বর এই কাঠামো সংশোধন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথম ১৫ দিনের জন্য জরিমানা এখন প্রতিদিন এক হাজার টাকা। ১৫ দিন পর থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত জরিমানা প্রতিদিন দুই হাজার টাকা। এরপর ৯১ দিন থেকে প্রতিদিনের জরিমানা তিন হাজার টাকা।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে নাদিরা বলেন, 'এটা এত দ্রুত বলা যাবে না। কারণ, খুব সম্প্রতি এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, ছুটির কারণে আমরা সাধারণত ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রচুর পরিমাণে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন পাই। মাসখানেকের মধ্যে আমাদের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য চলে আসবে।'

ছাড়

এসবি ও ডিআইপি কর্মকর্তারা জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সাধারণত তিন মাস পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা হয় না। এই সময়ের পর শিক্ষার্থীদেরও জরিমানা দিতে হবে।

এ ছাড়া, দ্বৈত নাগরিকদেরও শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

একজন জেষ্ঠ্য ডিআইপি কর্মকর্তা জানান, জরিমানার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে চীন ও আফ্রিকান দেশগুলোর নাগরিক বা শিক্ষার্থীরা বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, 'এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করলে তাদেরকে নিয়োগকারী কোম্পানি এবং তাদের অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শাস্তি দেওয়া হবে।'

ডিআইপি পরিচালক নাদিরা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসার চিঠি দেওয়ার আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট ভালোভাবে পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, অনেক আফ্রিকান নাগরিক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন।'

আইনি ব্যবস্থা

অবৈধভাবে দেশে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে 'ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৬৪'র অধীনে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করার অনুমোদন দিতে পারেন এসবির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক।

সূত্র জানায়, আইনি কাঠামোর দুর্বলতা ও তথ্যের স্বল্পতার কারণে বিদেশি নাগরিকরা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারী এই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই মাদক চোরাচালান, জালিয়াতি, জাল মুদ্রা লেনদেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, অনলাইন ক্যাসিনো, এমনকি মানবপাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকে অবৈধ চ্যানেলে নিজ দেশে অর্থপাচার করেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে অবৈধভাবে থাকার সুযোগ বা বৈধতা নেই। যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে দেশে থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে।'

'সবাইকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

ICT case: Hasina charged with crimes against humanity

ICT prosecution pressed formal charges against Sheikh Hasina in a case filed over crimes against humanity committed during July mass uprising

1h ago