উত্তুরে শীত

‘কষ্টোত শুরু হইল হামারগুলার নয়া বছর’

ঠান্ডার সঙ্গে বাতাস যোগ হয়ে শিতের তীব্রতা বেড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে তাই আগুনের তাপ পোহাচ্ছেন গ্রামের কয়েকজন। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রাম থেকে আজ সকালে তোলা ছবি। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

চারদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। দিনভর দেখা মিলছে না সূর্যের। ঠান্ডার সাথে হিমেল বাতাসযুক্ত হয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। এতে বিপদে পড়েছেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ছিন্নমূল ও চরের মানুষজন। তাদের অনেকেরই নেই শীতবস্ত্র।

লামনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে রেল লাইনের ধারে বাস করেন রহিমা বেওয়া (৬২)। সন্তানরা দিনমজুরি করে সংসার চালান। রহিমাকেও গ্রামে দিনমজুরি করতে হয়। ঠান্ডার কারণে তিনি ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। এদিকে ঘরেই শীত। তাই খড়কুটোতেই ভরসা।

'কষ্টোত শুরু হইল হামারগুলার নয়া বছর। এমনিতেই হামারগুলা কষ্ট সোকসময় নাগি থাকে। প্যাটোত ঠিকমতোন দুকনা ভাতও জোটে না,' বলেন রহিমা বেওয়া।

'মুই রেল লাইনের ধারোত ছোট এ্যাকনা ঘর করি বসবাস করবার নাইকছোং। মোর কোনো কম্বলও নাই। মুই ঠান্ডাত থরথর করি কাপোং। কাইও এ্যাকনা কম্বলও দ্যায় না।'

বলেন ঠান্ডায় কাজেও বেরোতে পারছেন না।

লালমনিরহাট রেল স্টেশন এলাকার ছিন্নমুল মানুষ কবিদুল ইসলাম (৬৫) বলেন, তার গায়ে দেওয়ার একটি চাদর আছে কিন্তু এটি দিয়ে ঠান্ডা যায় না। রাতের বেলা কষ্ট বাড়ে আরও অনেক বেশি। ঠান্ডার জন্য ঘুমাতেও পারেন না।'

'হামরাগুলা ছিন্নমূল মানুষ। হামরাগুলা প্যাটের ভোগ আর ঠান্ডার জ্বালা সহ্য কইরবার পাই না,' বলেন কবিদুল।

'জারোত হামরাগুলা মরি যাবার নাইকছি বাহে। জারোত হামরাগুলা কাহেল হয়া পরছি,' বলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার কাকেয়াটেপা গ্রামের কৃষি শ্রমিক জব্বার আলী (৫০)।

তিনি বলেন, গেল ৬-৭ দিন ধরে ঠান্ডা আর কুয়াশায় তারা বিপদে পড়েছেন।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক দিলবর হোসেন (৬৫) বলেন, কনকনে ঠান্ডার কারণে কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেন না। কোনো শ্রমিক জমিতে কাজ শুরু করলেও ঠান্ডার কারণে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোরগাছ গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নৌকার মাঝি বদিয়ার রহমান বলেন, 'জারের ঠ্যালায় হামরা নৌকা ঠিকঠাক চালবার পাবার নাইকছোং না। নৌকাত তেমন যাত্রীও হওয়ার নাইকছে না।'

'গাত ম্যালাগুলা কাপড়চোপড় দিয়াও জার থামবার পাবার নাইকছোং না। কনকন হাড়-কাঁপানি জারোত হামরাগুলা কাবু হয়া গ্যাইছোং,' তিনি বলেন।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর কুড়িগ্রামে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে চারদিক ঘনকুয়াশায় ঢেকে ছিল।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক আব্দুল্ল্যা আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, চলমান ঠান্ডা আগামী ২-৩ দিন থাকলে কৃষিতে ক্ষতি হতে পারে। বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঠান্ডায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় সবজির ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।

Comments

The Daily Star  | English
NID cards of Sheikh Hasina and family locked

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

1h ago