প্রায় ৩২ হাজার গয়নার দোকান ভ্যাট দেয় না

গয়নার দোকান
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দেশের প্রায় ৩২ হাজার গয়নার দোকান মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দেয় না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সংস্থাটি বলছে, মোট ৪০ হাজার গয়নার দোকানের মধ্যে মাত্র আট হাজার দোকান ভ্যাট দেয়। গত অর্থবছরে এসব দোকান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে।

দেশজুড়ে খুচরা ও পাইকারি দোকানে বিক্রি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজস্ব বোর্ড ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা বিক্রয় ডেটা কন্ট্রোলার বসানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

রাজস্ব বোর্ডের ভাষ্য, ডিভাইসগুলো বসানো হলে ভ্যাট ফাঁকি রোধ ও রাজস্ব আদায় বাড়তে পারে। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকে বিশ্বে সর্বনিম্ন।

গত ১৫ বছর ধরে সরকার ইলেক্ট্রনিক সেলস রেজিস্টার চালু করে সার্বিক কর আদায় বাড়াতে খুচরা বিক্রেতাদের ভ্যাটের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তারপরও অনেক দোকানে এই যন্ত্র নেই।

পরিস্থিতি বদলানোর অংশ হিসেবে রাজস্ব বোর্ড সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) ২৩ হাজার সদস্যকে ইএফডি সিস্টেমের আওতায় আনতে বৈঠক করে। তারা গয়নার দোকানে এখন পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ইএফডি বসাতে পেরেছে।

ভ্যাট নিবন্ধন ও ইএফডি স্থাপনের জন্য সব দোকানে চিঠি দিতে বাজুসকে অনুরোধ করেছে রাজস্ব বোর্ড।

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সবার জন্য সমতা তৈরি করতে এ ধরনের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তারা করের আওতায় আনতে চান।

তিনি বলেন, '২০২১ সাল থেকে আমরা সব গয়নার দোকানকে ভ্যাট ও করের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি। রাজস্ব বোর্ডকে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ডিভাইস না থাকায় ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে কম দামে গয়না বিক্রি করা দোকানিদের সঙ্গে ভ্যাট দেওয়া ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।'

সরকারি হিসাব অনুসারে, দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ২০ টন থেকে ৪০ টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এই চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ হয় চোরাচালানের মাধ্যমে।

বাজুসের হিসাব বলছে, প্রতিবছর প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ দেশে পাচার হয়ে আসে।

বর্তমানে গয়নার দোকানগুলোকে বিক্রির ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। সব দোকানকে করের আওতায় আনা গেলে বড় অঙ্কের ভ্যাট আদায় করা যাবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

এ অবস্থায় প্রথম পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব গয়নার দোকানে ইএফডি বসানো হবে বলে রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন।

রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাটনীতি অনুবিভাগের সদস্য আবদুর রউফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু জুয়েলারি ব্যবসায়ীরাই নন, আরও অনেক খাতই ভ্যাটের আওতার বাইরে থেকে গেছে।'

'এখন আমরা প্রতিটি খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। গয়নার দোকান দিয়ে শুরু করছি। বাজুস বলেছে, তারা এনবিআরকে সহযোগিতা করবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনা সহজ কাজ।'

তার মতে, 'রাজস্ব বোর্ড এখনো এই সহজ কাজটি শেষ করতে পারেনি। এটি সরকারের রাজস্ব আদায় প্রচেষ্টার দুর্বলতারই প্রতিফলন।'

দেশে যে পরিমাণ গয়না বিক্রি হয় তাতে জুয়েলারি খাত থেকে বছরে মাত্র ১০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় অবাস্তব বলে মনে করেন তিনি। বলেন, 'প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত।'

গয়নার দোকান থেকে ভ্যাট আদায়ের দায়িত্বে যারা আছেন তারা সেসব দোকান থেকে সুবিধা নিচ্ছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, 'প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ ভ্যাট আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে উপস্থিতি বাড়াতে হবে।'

পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক।

বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতার সংখ্যা পাঁচ লাখের সামান্য বেশি। কারণ বিপুল সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের বাইরে থেকে গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Pharmaceutical raw material import dependency Bangladesh

Heavy import reliance leaves pharma industry vulnerable

Despite success, Bangladesh's pharma industry hinges on imported raw materials

14h ago