রোনালদো নিজেই বিশ্বাস করেন না তিনি সেরা, দাবি বিশেষজ্ঞের

আবারও বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। নিজেকে সর্বকালের সেরা দাবি করেছেন পাঁচ বারের ব্যলন ডি'অর জয়ী তারকা। জনসম্মুখে যখন এমন জোরালো ঘোষণা দেন, তখন তিনি নিজেকেই ধোঁকা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মানবদেহের অঙ্গভঙ্গি বিশ্লেষণকারী ও 'লাই ডিটেক্টর' বিশেষজ্ঞ ড্যারেন স্ট্যানটন। অর্থাৎ মুখে নিজেকে সেরা দাবি করলেও তার শরীরী ভাষা ছিল ভিন্ন।

সম্প্রতি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম 'লা সেক্সতা'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেছেন, 'আমি সর্বকালের সেরা। আমিই গোট। আমি এতে বিশ্বাস করি। আমি এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সবচেয়ে পরিপূর্ণ ফুটবলার। আপনি মেসি, পেলে বা ম্যারাডোনাকে পছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু আমি ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সম্পূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠ। আমি এখনো আমার চেয়ে ভালো কাউকে দেখিনি।'

রোনালদোর সর্বশেষ এই সাক্ষাৎকার দেখার পর ক্রীড়াভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্ম 'ওএলবিজি'কে বলেন, 'রোনালদো বেশ দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। আমরা তার মধ্যে রাগের প্রকাশ দেখতে পাই— এই মুহূর্তে তিনি খুব রাগান্বিত এক ব্যক্তি। আমার মনে হয়, তিনি যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না বলে অনুভব করেন। আমরা তার হাসিতে "হর্সশু স্মাইল' দেখতে পাই, যা এক সেকেন্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম স্থায়ী হয়।'

'এটি আসলে রাগের প্রতিফলন, যা আনন্দের হাসির বিপরীত। তার ভ্রু কুঁচকানো, চোখ সংকুচিত— এগুলো বোঝায় যে তিনি মনে করেন না যে, তিনি যে দাবি করেছেন অন্যরা তাকে সেই কিংবদন্তির মর্যাদা দিচ্ছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, তার শরীরী ভাষা দেখলে মনে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি নিজেই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগছেন,' যোগ করেন তিনি।

মেসি, ম্যারাডোনা এবং পেলেকে ছাড়িয়ে রোনালদোর নিজেকে সর্বকালের সেরা ও 'পূর্ণাঙ্গ' ফুটবলার বলে দাবি প্রসঙ্গে বলেন, 'তার শরীরী ভাষা তার কথার সঙ্গে মেলে না। আমি বিশ্বাস করি না যে, তিনি সত্যিই নিজেকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মনে করেন। এটি আসলে শুধু মুখে বলা মাত্র। আমরা তার চোখের পলক ফেলার হার বৃদ্ধি দেখতে পাই, যা দুশ্চিন্তার লক্ষণ।'

'কাঁধ ঝাঁকানো, সেই স্বল্পস্থায়ী হাসি— এগুলো তার সত্যিকারের অনুভূতি প্রকাশ করে। তিনি তার আবেগ লুকানোয় তেমন দক্ষ নন, বরং যা অনুভব করেন, সেটাই প্রকাশ হয়ে যায়। তার ব্যক্তিত্বের কিছু দিক নিয়ে সম্ভবত তিনি নিজেই অনিশ্চিত এবং কীভাবে মানুষ তাকে দেখছে, সেটি নিয়েও তিনি দ্বিধায় ভোগেন,' যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

মেসিকে তিনি ঘৃণা করেন না— এই বিষয়ে রোনালদোর বক্তব্য সত্য বলে মনে করছেন স্ট্যানটন। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রভাব যে তাকে ক্লান্ত করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত তিনি, 'নম্রতা রোনালদোর জন্য উপকারী হতে পারত, কারণ তিনি অহংকারকে খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। সাক্ষাৎকারে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে সাংবাদিকও তার দাবির ঔদ্ধত্যে বিস্মিত হয়ে যান। তার সাফল্য সত্ত্বেও, অনেক সময় তার কথাবার্তা মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়।'

স্ট্যানটন সতর্ক করে বলেন, 'রোনালদো সম্ভবত বার্ধক্যকে মেনে নিতে পারবেন না। অনেক খেলোয়াড় বয়স বাড়ার পর কোচ, বিশ্লেষক বা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হন। কিন্তু রোনালদোর ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনা ঘটতে পারে— তিনি হয়তো তিক্ত ও হতাশ হয়ে পড়বেন, কারণ ফুটবল দুনিয়ায় তার প্রাসঙ্গিকতা কমে যাবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই একসময় বিদায় নেওয়ার দিন আসে, এবং তা মেনে নিতে হয়। তবে রোনালদো সেটি সহজভাবে নিতে পারছেন না। ফলে ভবিষ্যতে তিনি হয়তো আরও বিতর্কিত মন্তব্য করবেন, যাতে সংবাদমাধ্যমের নজরে থাকতে পারেন।'

'যদিও রোনালদো নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন, কিন্তু তার আচরণ দেখে মনে হয়, তিনি সবসময় মেসির সঙ্গেই নিজের তুলনা করেন। তিনি মেসিকে ঘৃণা করেন না, কিন্তু তার হতাশা স্পষ্ট— ফুটবলবিশ্ব, বিশেষজ্ঞরা এবং ভক্তরা কেন তাকে পরিষ্কারভাবে এক নম্বর হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, সেটাই তাকে বিচলিত করে,' উপসংহারে এমনটাই বলেন এই বিশেষজ্ঞ।

Comments

The Daily Star  | English

Govt warns of tough action against protesting NBR officials

The strike crippled activities at customs and ports, affecting exports, imports, and businesses.

2h ago