সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ, দ্বিতীয় পর্ব শুরু: ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়ে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পার হয়ে গেল। প্রথম অধ্যায় শেষ, আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করলাম। প্রথমে ছিল প্রস্তুতি পর্ব।'
সরকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা যেন এমন একটি দেশ গড়তে পারি, যেটা সুশৃঙ্খলভাবে চলবে। যে আইনি কাঠামোর মাধ্যমে, যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল, সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা পূর্ণরূপে বেরিয়ে চলে আসতে পারি।'
'যারা আত্মত্যাগ করেছে, তারা আমাদের নির্দেশ করে গেছে, আমরা যেন সেসব আইন-কানুন পাল্টে ফেলে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হই,' যোগ করেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে সুপারিশগুলো আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি। কমিশনের সদস্যরা আপনাদের সঙ্গে বসবে জিনিসগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য, চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না। চাপানোর ক্ষমতা আমাদের নাই। বোঝানোর জন্য—কেন করা হয়েছিল, কী জন্য করা হয়েছিল। সেদিক থেকে আমরা পুরো জিনিসটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আপনাদের সহযোগিতা চাই, এ কথা আমি বলবো না, কারণ এটা আমার একার কাজ না। যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, আপনাদের বলতে হবে সমাজের কাঠামো কোন ধরনের, কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে।'
সরকারের প্রথম ছয় মাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা একটা লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছি। চেষ্টা করেছি কোনো রকমে সচল করার জন্য। এই ছয় মাসের যে অভিজ্ঞতা, সেটা আমাদের সবাইকে প্রচণ্ড সাহস দেবে।'
'দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতা যে সমর্থন দিয়েছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য, এটা মোটা অক্ষরে লেখা থাকবে—আমরা একত্রিত হতে পারে। আমাদের হয়তো তর্ক-বিতর্ক, দূরত্ব তৈরির প্রবণতা আছে কিন্তু এই একটি জায়গায় আমরা এক ছিলাম। এখনো এক আছি, আগামীতেও এক থাকব সেই বিশ্বাস আমাদের আছে,' বলেন তিনি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, 'এটা যদি ঠিক থাকে, যেভাবে আমরা প্রথম অধ্যায় শেষ করলাম। দ্বিতীয় অধ্যায়ে যদি আমরা ঠিক থাকতে পারি, তৃতীয় অধ্যায়ের জন্য আমাদের কোনো চিন্তা নাই। আমরা নিশ্চয়ই নতুন বাংলাদেশ বানাতে পারবো।'
তিনি বলেন, 'যেসব শক্তি আমাদের ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে, ভণ্ডুল করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে, তাদেরকেও সুন্দরভাবে সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পেরেছি।'
আরও বাধার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'যাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ তাড়িয়ে দিয়েছে, অস্বীকার করেছে, ত্যাগ করেছে, তারা ফিরে আসার জন্য অত্যন্ত ব্যাকূল। প্রতিটি দিন তাদের জন্য মূল্যবান দিন, দেরি হলে তাদের জন্য অসুবিধা। সে জন্য আমাদের শক্ত থাকতে হবে, মজবুত থাকতে হবে এবং আমরা যেগুলো আলাপ করছি, সেগুলো নিয়ে মতভেদ থাকবে কিন্তু এর অর্থ এই না যে আমরা একত্রিত নই।'
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের প্রতি বড় সমর্থন গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যে কারণে অপরপক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে যেখানেই যায়। বহু গল্প রচনা করেছে সে। গল্প টিকাতে পারছে না। শেষমেশ ট্রাম্পের হাতেই আবার...সে গল্প চালাতে গিয়ে চালাতে পারলো না।'
জাতিসংঘের সমর্থন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'তাদের একটি প্রতিবেদন সারা পৃথিবী বদলে দিয়েছে। এখন কারও বয়ান আর কেউ শুনবে না। ওইটাই ফাইনাল। একদম অক্ষরে অক্ষরে বলে দিয়েছে কোথায় কাকে মেরেছে, কীভাবে মেরেছে। এর থেকে বের হওয়ার তো কারও কোনো উপায় নাই! বাংলাদেশকে ঘিরে যে অপপ্রচার চলছিল, এই এক প্রতিবেদনে সব সমাপ্ত। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন বের হয়েছে, তাদের বক্তব্যও অত্যন্ত জোরাল।'
আয়নাঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা সেদিন আয়নাঘরে গেলাম। মানুষ কত নির্মম হতে পারে, বীভৎস দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে, নৃশংস হতে পারে, এর চেয়ে বড় নমুনা হয়তো পাওয়া যাবে না। আমাদের শুধু দেখতে কষ্ট হয়েছে। যারা বছরের পর বছর সেখানে থেকেছে, আপনাদের মধ্যেও আছে, তাদের কথা চিন্তা করেন। তাদের প্রতিটি বর্ণনা-অভিজ্ঞতা গুম কমিশনের রিপোর্টের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ প্রথম বুঝতে পারলো আমরা কীসের কথা বলছি।'
Comments