রমজানের আগেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

ক্রেতারা বলছেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহে তেমন উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে শীর্ষ সরবরাহকারীরা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অথচ পবিত্র রমজানে বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশির উদ্দিন জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হবে। ওই মন্তব্যের পাঁচ দিন পর ঢাকার প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেলের এক পাইকারি বিক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ কমেছে।'

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ আগের মতোই আছে।'

অন্যদিকে, রাজধানীর মৌলভীবাজারের এক ব্যবসায়ী ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'সরবরাহ বেড়েছে।'

ক্রেতারাও একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, প্রথম দুই দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল পাননি। তৃতীয় দোকানে পান। কিন্তু পাঁচ লিটারের বোতল ছিল না। ছিল দুই লিটারের বোতল।

ঢাকার মিরপুরের রূপনগরের বাসিন্দা লাইজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল চার দোকান ঘুরে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল কিনেছি।'

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বিবৃতিতে বলেছিল, তেলের সংকট কৃত্রিম। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'সরকার বলছে সংকট কৃত্রিম, তবে এখনো সমাধান করা হচ্ছে না।'

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ কয়েকটি শহরের বাজারগুলোর খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত মাসে সরবরাহকারীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর অনুরোধ করলে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যায়।

সরবরাহ ঘাটতির কারণে ক্রেতারা সয়াবিন তেলের জন্য এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যাচ্ছেন। দেশে এই পণ্যের বার্ষিক ২৪ লাখ টন চাহিদা মেটাতে ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খুচরা দামের তথ্য অনুসারে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৭৫ থেকে ১৭৬ টাকা। গত মাসের তুলনায় প্রায় এক শতাংশ বেশি। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে দুই দশমিক ৩৩ শতাংশ।

মিরপুরের পল্লবী এক্সটেনশন এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমার দোকানের জন্য প্রয়োজনীয় সয়াবিন তেলের মাত্র ১০ শতাংশ পেয়েছি। আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) পরিস্থিতি একই। সরবরাহ বাড়েনি।'

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আবু বকর সিদ্দিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগেও ডিলারদের কাছ থেকে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল চেয়েছিলাম এর এক-চতুর্থাংশ পাই। এখন তাও পাচ্ছি না। সরবরাহ কমেছে।'

রাজধানীর অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা আবুল হাশেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পেয়েছি। এখন অর্ধেকে নেমেছে।'

উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ২৪ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এক পাইকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পরও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়েনি।'

তার মতে, আগে ডিলাররা চাহিদার মাত্র পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ সরবরাহ করতো। পরিস্থিতি একই আছে।

ফ্রেশ ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমদানিবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে।'

'সেই হিসেবে আগামী ৫ থেকে ৬ মার্চের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'

পুষ্টি ব্র্যান্ডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার ফোন ধরেননি। খুদে বার্তার জবাব দেননি।

তীর ব্র্যান্ডের বাজারজাতকারী সিটি গ্রুপের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ফোন ধরেননি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন) আতিয়া সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোজ্যতেলের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা, মূল্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখতে ডিএনসিআরপি সদরদপ্তরে স্টেকহোল্ডার সভার আয়োজন করা হয়েছে।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলে সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তারা জানে সমস্যাটা কোথায়। জেনেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

How Dhaka’s rickshaw pullers bear a hidden health toll

At dawn, when Dhaka is just beginning to stir, thousands of rickshaw pullers set off on their daily grind.

19h ago