ইতিহাসের সবচেয়ে 'সস্তা' ১১৬ মিলিয়ন ইউরো

'রাইস, রাইস বেবি'। এমিরেটস স্টেডিয়ামের লাউডস্পিকার তখন কাঁপছে এমন শব্দেই। আবার কখনো 'টোয়াইস অ্যাজ রাইস'। ডেকলান, আর্সেনাল, এবং তার তিন গোলে যেন কাবু রিয়াল মাদ্রিদ।

গানারদের '৪১' নম্বর এই রাত কখনোই ভুলতে পারবেন না—দুইটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিক গোল যা ম্যাচে তো বটেই, অনুশীলনেও কখনো করেননি। অবিসংবাদিত নায়ক, একেবারে প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া পারফরম্যান্সে, ডেকলান রাইস জায়গা করে নিয়েছেন হাইবারি ও এমিরেটসের হল অব ফেমে—এমন এক পারফরম্যান্স যা মনে করিয়ে দেয় কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরিকে।

কেউই কল্পনা করতে পারেনি—কিংস্টনে জন্ম নেওয়া, চেলসির যুব দল থেকে বেড়ে ওঠা, মাত্র ১৫ বছর বয়সে ওয়েস্ট হ্যামে যাওয়া, আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সেই ছেলেটিই একদিন বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার হয়ে উঠবেন এবং এমবাপে, ভিনিসিয়ুস, বেলিংহ্যাম, ও আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদকে এমনভাবে ধ্বংস করবেন, তাও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।

একজন নিখুঁত পেশাদার, পরিশ্রম আর নিষ্ঠায় গড়া ফুটবলার, যার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু, কিন্তু ইতোমধ্যেই তিনি জিতে নিয়েছেন তার প্রাপ্য মুকুট—তাও একেবারে রাজকীয় কায়দায়।

ম্যাচে এদিন প্রথমার্ধে পুরোপুরি আর্সেনালের দাপট ছিল, কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। ৫৭তম মিনিটে, ম্যাচ যখন ০-০, ডেকলান রাইস ফ্রি-কিক নিতে এলেন। আর তখনই, যেন ডান পায়ের রবার্তো কার্লোস, রাইস—যিনি কখনোও তার ক্যারিয়ারে ফ্রি-কিক থেকে গোল করেনি—সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা তার শুরু হোক। ম্যাচ শেষে হেসে তিনি বললেন, 'আমি আসলে বলটা ক্রস করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাধা (মানব দেওয়াল)  আর গোলকিপারকে দেখে শট নিলাম।'

ক্রস করতে চেয়েছিলেন, তাই না! আর দ্বিতীয় গোল? ৭০তম মিনিটে সেই গোল তো কথায় বোঝানোই যায় না—এত নিখুঁতভাবে পোস্টের কোণায় লেগে গোল হলো, যেন স্বয়ং ডেভিড বেকহামই ফিরে এসেছেন। অথচ এর আগে ওয়েস্ট হ্যাম ও আর্সেনালের হয়ে ৩৩৮ ম্যাচ খেলে একটিও ফ্রি-কিক গোল করেননি। কিন্তু মাত্র ১২ মিনিটে করলেন দুইটি—প্রথমটা রবার্তো কার্লোসের মতো, দ্বিতীয়টা বেকহামের স্টাইলে।

যখন ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড তাকে ১১৬.৬ মিলিয়ন ইউরোতে আর্সেনালে বিক্রি করে, পেপ গার্দিওলা হয়তো হাল ছেড়েছিলেন, কিন্তু মিকেল আর্তেতা তখন থেকেই খুশিতে হাত ঘষছিলেন। তিনি জানতেন—এটা ইংল্যান্ডের সেরা মিডফিল্ডারকে কেনা, এবং নিজের পজিশনে অদ্বিতীয় একজনকে। আর্সেনালের ইতিহাসের সবচেয়ে দামী সাইনিংটি এক মুহূর্তে বুঝিয়ে দিলো—প্রতিটি পয়সার দাম সে আদায় করে নিচ্ছে।

এই মুহূর্তে রাইস তার দ্বিতীয় মৌসুমে ৭টি গোল ও ৮টি অ্যাসিস্ট করেছেন আর্সেনালের হয়ে, যার মধ্যে সর্বশেষ দুটি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি পৌঁছেছেন এক দারুণ ফুটবলীয় উচ্চতায়, তাও পরিপূর্ণতার আগেই।

আর কখনও কেউ তাকে 'বোরিং' ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলবেন না। ম্যাচ শেষে রাইস বললেন, 'এগুলো জাদুকরী মুহূর্ত, জানেন তো? এগুলো সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। এটা ছিল একদম বিশেষ, বিশেষ রাত।'

গ্যাব্রিয়েল ম্যাগালহায়েস, যিনি চোটের কারণে এই ম্যাচে ছিলেন না, ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে একটা ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়—রাইস 'ম্যাচের সেরা' পুরস্কার হাতে হাসছেন। গ্যাব্রিয়েল বলে ওঠেন, 'হে ঈশ্বর, আমাকেও দাও এই ডান পা! অবিশ্বাস্য ভাই!'

গ্যাব্রিয়েলের মতোই, আজ সব আর্সেনাল ভক্ত ঘুম থেকে উঠেছেন চোখে ঘুম আর মনে দুইটা গোলের প্রশান্তি নিয়ে—ডেকলান রাইসের ফ্রি-কিক থেকে করা ঐতিহাসিক গোল, যেগুলো ইতোমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এক সপ্তাহ পর বার্নাব্যুতে যা-ই ঘটুক—এই রাত আর্সেনাল ভক্তদের হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

7h ago