এ বছর পহেলা বৈশাখে বিক্রি বেড়েছে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আজ চৈত্রসংক্রান্তি। রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। বাঙালির প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসবকে কেন্দ্র করে গত বছরের তুলনায় এ বছর পোশাক, মিষ্টি ও মাছের বিক্রি বেশ বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত বছর দেশের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের মাত্র দুই দিন পর পহেলা বৈশাখ ছিল। এ বছর এই দুই প্রধান উৎসবের ব্যবধান প্রায় দুই সপ্তাহ। এই ব্যবধান পণ্য বিক্রিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

নতুন বাংলা বছর উদযাপনের শেকড় মুঘল আমলে। সম্রাট আকবর এই অঞ্চলে কর আদায়ের সুবিধায় বর্ষপঞ্জিকা সংস্কারের মাধ্যমে 'হালখাতা'র সূচনা করেছিলেন।

বিগত বছরগুলোয় বৈশাখ উপলক্ষে নতুন পোশাক বিক্রি হতো দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর বার্ষিক বিক্রির আনুমানিক চার ভাগের এক ভাগ।

রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিক্রি অনেক ভালো।'

'গত বছর পহেলা বৈশাখ ছিল ঈদুল ফিতরের দুই দিন পর। এবার দুটি উৎসবের মধ্যে দুই সপ্তাহের ব্যবধান থাকায় বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে। গত বছরের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো।'

ঈদুল ফিতরের পর অল্প সময় থাকায় বৈশাখের পুরো প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

ফ্যাশনওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প ও তাঁত পণ্যের খুচরা বিক্রেতা 'কে ক্রাফট'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছরের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও প্রত্যাশার তুলনায় বিক্রি কম।

এই বছর উদযাপন কেমন হবে তা ধারণা করতে না পারায় এমনটি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পোশাক, সাজসজ্জা ও লাইফস্টাইল পণ্যের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান অঞ্জন'স-এর মালিক শাহীন আহমেদও একই কথা বলেছেন।

শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড পহেলা বৈশাখের প্রচণ্ড গরমের কথা মাথায় রেখে 'সামার কালেকশন' এনেছে।

স্নোটেক্স গ্রুপের মিডিয়া ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপক এস কে রাহাত অয়ন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রাহকদের সাড়া উৎসাহব্যঞ্জক।'

'বিক্রি বেশ ভালোই চলছে। এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি হওয়ায় অনেকে হয়ত বৈশাখের কথা মাথায় রেখে ঈদের কেনাকাটা সেরেছেন।'

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির ২০১২ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশব্যাপী ফ্যাশন হাউসগুলো বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে।

সেই জরিপে আরও বলা হয়, বছরের মোট বিক্রির ৫০ শতাংশের বেশি হয় ঈদুল ফিতরে ও অন্তত ২৫ শতাংশ বিক্রি হয় পহেলা বৈশাখে।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের উপহার পাঠানোয় বাংলা নববর্ষ মিষ্টি প্রস্তুতকারকদের জন্য অন্যতম বড় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

বৈশাখ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মিষ্টি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির আগে প্রতি বছর দেশজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মিষ্টি বিক্রি হয়েছিল।

প্রিমিয়াম সুইটসের হেড অব বাংলাদেশ অপারেশনস মাহবুবুর রহমান বকুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এবারের পহেলা বৈশাখে মিষ্টি বিক্রি বেড়েছে পাঁচ শতাংশ।'

'গত বছরের পহেলা বৈশাখ ছিল ঈদের মাত্র দুই দিন পর। এ বছর সেই ব্যবধান প্রায় দুই সপ্তাহ। তাই বিক্রি ভালো হচ্ছে।'

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হলে বিক্রি আরও বেশি হতো বলে মনে করেন তিনি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখের সকালে আলু ভর্তা ও ইলিশ ভাজা দিয়ে এক প্লেট পান্তা খেয়ে অনেকে দিনব্যাপী উদযাপন শুরু করেন। ইতোমধ্যেই জাতীয় মাছ ইলিশের চাহিদা ও দাম প্রতি বছরের মতো এবারও বেড়েছে।

মাছ ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, চাহিদা বেশি। সরবরাহ কম। ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে।

যাত্রাবাড়ীর পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী খোকন চন্দ্র সমাদ্দার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পহেলা বৈশাখের কারণে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম কেজিতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।'

রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের শুক্কুর আলী এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

তবে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের বড় তাজা ইলিশ পাওয়া দুষ্কর বলে জানান তিনি।

বর্তমানে ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৪০০ টাকা ও ৫৫০ থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকার বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের তাজা ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। এর দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

শুক্কুর আলী আরও বলেন, 'ক্রেতারা হিমাগারের ইলিশ নিতে চান না। তারা তাজা মাছ খোঁজেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

7h ago