বুয়েটে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১/টার্ম-১-এর স্নাতকের নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল বিকেলে বুয়েট কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিচিত সভায় বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেছেন, 'আজকে তোমাদের একটি বিশেষ দিন। আমি আশা করি তোমরা বুয়েটে চান্স পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রত্যেকেরই নৈতিক দায়িত্ব আছে। এই দায়িত্বটা স্কুল, কলেজ এবং নিজের বাসা থেকেই শেখা হয়ে থাকে।'
'আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করছি তাদের সন্তানদের ঠিকভাবে পড়ালেখা করছে কিনা, তারা সঠিক পথে আছে কিনা-সেই বিষয়ে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরেও খবর রাখতে হবে। এবার যারা ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে বুয়েটে ভর্তি হয়েছ, তোমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, বুয়েটের ক্লাসে এসে তোমাদের কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটের পড়া করানো হবে না। এটা হলে আমরা অ্যাডভান্স জিনিস শেখাতে পারব না। সেক্ষেত্রে তোমাদের দায়িত্ব নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো করতে হবে। একারণে একটু বেশি সময় দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে,' বলেন তিনি।
বুয়েট উপাচার্য বলেন, 'এটা ভাববার কোন কারণ নেই যে, বুয়েটে ভর্তি হয়েছি মানেই ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি। ভালো কিছু করতে হলে, ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রথম দিন থেকেই এমনকি প্রথম ক্লাস থেকেই তোমাদেরকে একাগ্রচিত্তে পড়ালেখা করতে হবে, শিক্ষকদের কথামতো চলতে হবে, সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে।'
'ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে যদি পাখা গজায় তাহলে পিছনে পড়ে যাবে। আর ফার্স্ট ইয়ারে পিছিয়ে গেলে পরে কাভার করা খুবই কঠিন হবে। তাই আমি আগে থেকেই বলছি তোমরা সতর্ক হবে এবং সব সময় এক দুই ধাপ আগে বা ক্লাসের সঙ্গেই থাকবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো করে রাখবে। আমার অনুরোধ তোমরা পড়ালেখায় মনোযোগী হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিটি শিক্ষার্থীর পিছনেই দেশের ও জনগণের কষ্টার্জিত টাকা খরচ হচ্ছে। দেশের ও জনগণের কষ্টার্জিত টাকা খরচের জবাবদিহি আমাদের করতেই হবে। হয় এই পৃথিবীতে না হয় আখিরাতে। এটার ব্যাপারে সবারই সজাগ থাকতে হবে। তোমাদের জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়। তোমাদের সুনামই হবে আমাদের সুনাম।'
'যতই ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং করা হোক না কেন, পাশ করে যাওয়ার পর তোমাদের অর্জনের মাধ্যমেই ইউনিভার্সিটির সুনাম হবে, দেশের সুনাম হবে। আমি আশা করব তোমাদের মাধ্যমে এই বুয়েটের সুনাম আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে,' যোগ করেন তিনি।
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৈৗধুরী বলেন, 'তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমরা বুয়েটে ভর্তি হয়েছ। বুয়েটে ভর্তি হতে পারায় এলাকায় সামাজিকভাবে তোমার কদর তৈরি হয়েছে। তোমরা এখন বুয়েটের প্রতিনিধিত্ব করছ। সেটা মনে রাখতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই টাকা আসে কোথা থেকেকে? সরকার যে বাজেট বরাদ্দ দেয়, সরকার টাকাটা পায় কোথায়? এই টাকা আসলে আসে ট্যাক্স কালেকশনের মাধ্যমে। ট্যাক্স সবাই দেয়। একজন রিকশাচালক যদি এক বা দুই কেজি চাল কেনেন সেখানেও ট্যাক্স দিতে হয়। তিনি নিজের ট্যাক্সটা বুঝে দেন না, কিন্তু সেই ট্যাক্সটা বিভিন্ন পর্যায়ে আদায় হয়। সেই ব্যবস্থা সারা দুনিয়াতে আছে এবং আমাদের দেশেও আছে। সুতরাং জনগণের টাকায় তোমরা পড়ছ এবং এটাই সত্য, এটাই বাস্তব।'
'এর একটি দায়িত্বটা আমাদের প্রত্যেকের উপরেই আছে। শিক্ষকদের দায়িত্ব ভালো পড়াতে হবে। আমাদের এমন প্রকৌশলী তৈরি করতে হবে যেন তারা দেশের কাজে লাগে, জনগণের কাজে লাগে। ঠিক তোমাদেরও এখানে কিছু দায়িত্ব আছে। যেই মুহূর্তে তুমি বুয়েটে ভর্তি হয়েছ, সেই মুহূর্ত থেকেই তুমি চাও বা না চাও সেই দায়িত্ব তোমার উপরে এসে পড়েছে। সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। দায়িত্বের চিন্তাটা মাথায় থাকলে অনেক কঠিন সময়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তোমাদের ভুল হবে না,' বলেন তিনি।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নায়েব মো. গোলাম জাকারিয়ার সঞ্চালনায় পরিচিতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চোধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাসুদ। অনুষ্ঠানে অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট, সেন্টার, দপ্তর ও পরিদপ্তরের পরিচালক, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments