বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশে বিনিয়োগ
টমাস কোনিং। ছবি: সংগৃহীত

যদিও বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরিপোশাক রপ্তানিকারক দেশ তবুও একে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অস্পষ্ট নিয়মকানুনসহ বড় বড় সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এরপরও এসব প্রতিবন্ধকতা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করতে পারেনি। উল্টো, অনেকেই এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এমনই একজন বিনিয়োগকারী জিনস ও ক্যাজুয়াল পোশাক বিষয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠান অসপিগ জিএমবিএইচ'র প্রধান নির্বাহী টমাস কোনিং।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে অংশ নেওয়া টমাস কোনিং দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই যেসব বাধার মুখে পড়ে সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

তবুও তিনি বাংলাদেশের পরিবর্তিত নীতি ও সর্বোপরি এর জনগণের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

'আপনি এ দেশের উত্তরাঞ্চলে ভালো কারখানা পেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি দক্ষতার সঙ্গে পণ্য বন্দরে আনতে না পারেন তাহলে সব ব্যর্থ হয়ে যাবে। পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে।'

'এসব সমস্যা সত্ত্বেও অসপিগ অন্য কোথাও যাচ্ছে না।'

'বিশেষ করে ইন্ডিটেক্সের সিইও ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে আমরা যেসব বক্তব্য শুনেছি তা ছিল গভীর উৎসাহব্যঞ্জক। তারা আশা দিয়েছে যে ইতিবাচক পরিবর্তন কেবল আসছে না, তা ইতিমধ্যে চলছে।'

তার মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ সঠিক পথে চলছে।

'আমাদের যা দরকার তা হলো স্থিতিশীলতা। আমরা তা আসতে দেখছি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছি। আমি অবশ্যই বলব, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের খুব ইতিবাচক ধারণা আছে।'

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্রুত করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো।'

'আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সুস্পষ্ট ও সুশৃঙ্খল কাঠামো প্রয়োজন। একটি প্রকল্পের জন্য একাধিক বিভাগের সঙ্গে কথা বললে সবকিছু ধীর হয়ে যায়। আমাদের প্রয়োজন সহজলভ্যতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা।'

অসপিগ জিএমবিএইচ'র প্রধান নির্বাহী জানান, তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারকে নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ও দেশের মানবিক সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে মূল সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়া আহ্বান জানিয়েছে।

আশা থাকলেও লজিস্টিক সুবিধা নিয়ে মাথাব্যথা থাকছেই। বিশেষ করে, পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে।

'আপনি যদি ঢাকার কাছে কারখানা গড়েন এবং ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে চান তাহলে আপনাকে চট্টগ্রাম দিয়ে যেতে হবে। মাত্র ২৭০ কিলোমিটার দূরত্ব, কিন্তু ট্রাকে সময় লাগে দশ ঘণ্টা। এটা আশাব্যঞ্জক নয়। পথে অন্তত ১৬টি প্রতিবন্ধকতা আছে।'

একটি বন্দরের ওপর নির্ভর করে বৈদেশিক বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া যতটা কঠিন বলে মনে হয় বাস্তবতা এর চেয়েও অনেক বেশি কঠিন।

টমাস কোনিং আরও বলেন, 'তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।'

তবে এর একটি মূল শক্তি হলো জনগণ। 'এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে আমাদের কারখানা আছে। আমরা এ দেশের মানুষজনকে চিনি। তারা শিখতে আগ্রহী, কঠোর পরিশ্রমী ও অনেকেই সুশিক্ষিত।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেক দেশে দক্ষ জনশক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যা ও মানসিকতা দুটোই আছে। এটাই আপনাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।'

অসপিগ জিএমবিএইচ ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোয় ডেনিম ও অন্যান্য পোশাক সরবরাহ করে।

তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও প্রসারিত করার পরিকল্পনা আছে। 'হ্যাঁ, আমরা ইতোমধ্যে এখানে পোশাক খাতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছি। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছি।'

তিনি জানান, ওসপিগ বর্তমানে স্পেন, ইতালি ও তুরস্ক থেকে যন্ত্রপাতি আনার খরচ হিসাব করছে।

'তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশে হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সম্ভাবনা আছে,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা ওয়ালটনের কারখানা দেখেছি। তারা রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোন, সোলার সিস্টেমের মতো উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন করছে।'

'আমরা একটি সাইকেল সংযোজন কারখানাও দেখেছি। বাংলাদেশ আরও অনেক কিছু করতে সক্ষম। শুধু ওষুধ নয়, যন্ত্রপাতি উৎপাদনেও।'

'আমরা প্রত্যাশা নিয়ে এই সম্মেলনে এসেছি। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। বাংলাদেশ প্রস্তুত, আমরাও প্রস্তুত।'

Comments

The Daily Star  | English

Digital dreams, disconnected realities

A deep-rooted divide in access to devices, internet connectivity, and digital literacy separates rural communities from urban counterparts

15h ago