২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, এই সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর।

তিনি বলেন, যদি বেশিরভাগ সংখ্যক সংস্কারের পক্ষে একমত হয়, তাহলে সময় বেশি লাগবে। যদি আমরা স্বল্প সংস্কারের দিকে যাই, তাহলে ডিসেম্বরেও নির্বাচন হতে পারে।

'তবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না,' যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার প্রচারিত হয়।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পাবে কি না—এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

তিনি যোগ করেন, যখন এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসবে, তখন নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও সামনে আসবে।

তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য অনেক দল বলতেও পারে যে এই আইনের অধীনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না, ইত্যাদি।'

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের 'হানিমুন পিরিয়ড' শেষ হয়ে গেছে কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও তাদের জন্য একটি ভালো সমাধান।

তিনি বলেন, তারা বলছে না যে 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলে যাক, আজই নির্বাচন হোক। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে মানুষজন বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করো।'

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং নিজেকে এখনো 'আইনসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী' দাবি করার বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে—জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, 'আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, যদি ভারত শেখ হাসিনাকে রাখতে চায়, তাহলে সম্ভবত এই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারব না। কিন্তু তিনি সেখানে থাকাকালীন কথা বলা উচিত না। কারণ, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে।'

'তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের মানুষকে উসকানি দিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এর ফলে আমাদের ভুগতে হচ্ছে,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

মোদির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'যদি আমি ঠিকঠাক স্মরণ করে থাকি, তিনি বলেছিলেন যে ভারত এমন দেশ যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত, আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।'

ভারত কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে, বাংলাদেশে কি তিনি বিচারের মুখোমুখি হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে তারা তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। এখনও তারা কোনো সাড়া দেয়নি, কিন্তু যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং আদালত নোটিশ পাঠাবে...'

এই পর্যায়ে উপস্থাপক বলেন, 'তাহলে আপনি বলছেন যে মোদি আপনাকে বলেছেন ভারতের মতো দেশে—যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করার অভিযোগ আছে—সেখানে তারা তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কিছু করতে পারবে না এবং আপনাকে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি যে তাকে (শেখ হাসিনা) বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত পাঠানো হবে?'

উত্তরে ড. ইউনুস বলেন, 'না।'

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এটি আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। আমরা বুঝতে পারি যে তাদের আইনি পরিস্থিতি কী, আমাদের আইনি পরিস্থিতি কী। আমরা আদালতের আইনি নোটিশের জন্য অপেক্ষা করছি।'

ড. ইউনূস কি ভারতের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে চীন সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কি না এবং তিনি এর মাধ্যমে কোনো বার্তা দিচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি সেখানেই যাচ্ছেন যেখানে তিনি যেতে চান।

ড. ইউনূস বলেন, 'আমি ভারতে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। তাই চীনে গিয়েছি এবং এখন মালয়েশিয়া যাব।'

তিনি বলেন, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন।

ভারত তাকে এড়িয়ে চলছে কি না এবং বিকল্প হিসেবে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছেন কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'এড়িয়ে চলছে বলব না। এটা হয়তো সাময়িক ব্যাপার। এটা এমন বিষয়, যা আমাদের একসঙ্গে সমাধান করতে হবে। আমি এটাকে চূড়ান্ত কিছু হিসেবে নেব না। এটা দীর্ঘস্থায়ী কিছু নয়।'

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, তার সরকারের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে খুব ভালো, শক্তিশালী ও উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখেন কি না বা বেইজিং ও ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'এটা বেছে নেওয়ার বিষয় না, তারা সবাই আমাদের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র ভালো বন্ধু, চীন ভালো বন্ধু, ভারত ভালো বন্ধু।'

পাচার হওয়া বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পেতে বিদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা করছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

Comments

The Daily Star  | English
Starlink logo

Yunus approves Starlink's license in Bangladesh

Bangladesh is the second country in South Asia, after Sri Lanka, to welcome Starlink

9m ago