তাইজুল-নাঈমের ঘূর্ণিতে হতাশা ঝেড়ে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

ছবি: বিসিবি

প্রথম সেশনে ছিল জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে ফেরানোর স্বস্তি। কিন্তু সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ কোনো উইকেট ফেলতে না পারায়। সেই হতাশা ঝেড়ে তৃতীয় সেশনে দুর্দান্ত কায়দায় ঘুরে দাঁড়াল তারা। নাঈম হাসান উইকেট উৎসবের শুরু করার পর সব আলো কেড়ে নিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ৫ উইকেটের সুবাদে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন নিজেদের করে নিল টাইগাররা।

সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাট করেছে জিম্বাবুয়ে। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ৯০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৭ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করেছে তারা।

চা বিরতি পর্যন্ত ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের নৈপুণ্যে। তিনি ৬০ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার ১৬তম ৫ উইকেট। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অফ স্পিনার নাঈম। ৪২ রান খরচায় তার শিকার ২ উইকেট।

মধ্যাহ্ন বিরতির সময় জিম্বাবুয়ের রান ছিল ২৮ ওভারে ২ উইকেটে ৮৯। পরের সেশনে বাংলাদেশকে তীব্র হতাশায় পোড়ায় তারা। আরও ২৮ ওভার খেলে যোগ করে আরও ৭২ রান। বাংলাদেশ এই সেশনে নিতে পারেনি কোনো উইকেট। তবে চা বিরতির পর জ্বলে ওঠেন দুই স্পিনার তাইজুল ও নাঈম। ফলে ৩৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে আর ৬৪ রান জমা করতে ৭ উইকেট হারায় সফরকারীরা। এর মধ্যে শেষ ৫ উইকেট পড়ে মাত্র ১৭ রানের মধ্যে।

২ উইকেটে ১৬১ রান নিয়ে তৃতীয় সেশন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। প্রথম ওভারেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় নিক ওয়েলচকে। সকাল থেকে ক্র্যাম্পের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। আর সহ্য করতে না পেরে আহত অবসরে যান ব্যক্তিগত ৫৪ রানে। উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশের জন্য তার বেরিয়ে যাওয়া আশীর্বাদ হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর টানা দুই ওভারে উইকেট পান নাঈম।

নতুন ব্যাটার ক্রেইগ আরভিনের প্রতিরোধ বেশিদূর এগোয়নি। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক স্কয়ার কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে গ্লাভসবন্দি হন জাকের আলী অনিকের। ডটের পর ডট খেলে তিনি করেন ৩১ বলে ৫ রান। লম্বা সময় ক্রিজে থাকা শন উইলিয়ামসন ফেরেন ফাইন লেগে তানজিম হাসান সাকিবের অসাধারণ ক্যাচে। প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে বাঁহাতি ব্যাটার থামেন ৬৭ রানে। ১৬৬ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৭ চার ও ১ ছক্কা।

৪ উইকেটে জিম্বাবুয়ের পুঁজি ২০০ স্পর্শ করে ৭৮তম ওভারে। পরের ওভার থেকে শুরু হয় তাইজুলের তাণ্ডব। একটানা দারুণ বোলিংয়ের সুফল ঘরে তোলেন তিনি। তীক্ষ্ণ বাঁক খাওয়া ডেলিভারিতে পরাস্ত হন ওয়েসলি মাধেভেরে। ৩২ বলে ১৫ রান করে তিনি ক্যাচ দেন জাকেরের হাতে।

নিজের পরের ওভারে জোড়া শিকার ধরেন তাইজুল। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। টার্নে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। রিভিউ নিয়ে নষ্ট করে ফেরেন তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগত লেগ স্টাম্পে। ৯ বলে তার রান ৬। এরপর গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান রিচার্ড এনগারাভা। সোজাসুজি যাওয়া বলে হন বোল্ড।

৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট খোয়ানো জিম্বাবুয়ে প্রতিরোধ গড়ার আর সুযোগ পায়নি। ৮৫তম ওভারেও পড়ে দুই উইকেট। প্রথম বলে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ভিনসেন্ট মাসেকেসা। এই সংস্করণে নিজের প্রথম ইনিংসে তার সংগ্রহ ১৪ বলে ৮ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন তাইজুল।

ওই ওভারের শেষ বলে আউট হন আবার ক্রিজে নামা ওয়েলচ। তাইজুলের আর্ম বলের লাইন মিস করে স্টাম্প হারান তিনি। মাঠে ফিরে খেলতে পারেন স্রেফ দুটি ডেলিভারি। ১৩৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ রান করেন ওয়েলচ। ৪ উইকেটে ২০০ থেকে ৯ উইকেটে ২১৭ রানে পরিণত হওয়া জিম্বাবুয়ে কোনোমতে দিনের বাকি ওভারগুলো পার করে দেয়। ৫৯ বলে ১৮ রানে ব‍্যাট করছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার টাফাডজোয়া সিগা। ১৫ বলে ২ রানে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ব্লেসিং মুজারাবানি।

বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকবে দ্বিতীয় দিনে যত দ্রুত সম্ভব জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দেওয়ার।

Comments

The Daily Star  | English

‘People's will, not mine’

Yunus tells Malaysia's Bernama why he stepped into Bangladesh's political hot seat

37m ago