ঢাকার বায়ু দূষণে এয়ার পিউরিফায়ার কতটা কার্যকর?

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীর বায়ু দূষণ কমাতে প্রায় ৩০টি জনবহুল স্থানে শিল্পমানের এয়ার পিউরিফায়ার বসানোর পরিকল্পনা করছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগের সমালোচনা করে বলছেন, এটি বাস্তবসম্মত কোনো সমাধান নয়। ঢাকার তীব্র বায়ু দূষণের মূল কারণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

তারা বলছেন, এ ধরনের যন্ত্রে শহরের তীব্র দূষিত বাতাসের ওপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলবে।

ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, একজন বিদেশি দাতার অর্থায়নে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন স্থানে ২৫ থেকে ৩০টি পিউরিফায়ার স্থাপন করা হবে। বিনিময়ে, ডিএনসিসি ডিভাইসগুলোতে সীমিত পরিসরে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিতে পারে।

তিনি জানান, প্রতিটি পিউরিফায়ারের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।

'৮০টি গাছ যেমন বাতাস বিশুদ্ধ করে, প্রতিটি ডিভাইসও একই কাজ করবে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি শিগগিরই শুরু হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই প্রস্তাব পেয়েছি। পাইলট প্রকল্পের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, আমরা প্রকল্পটি সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করব। সেক্ষেত্রেও প্রকল্পের সব খরচ সিএসআর ফান্ড থেকে মেটানো হবে, আমাদের একমাত্র খরচ শুধু বিদ্যুতে।'

'আমরা আশা করছি এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করতে পারব,' বলেন তিনি।

ডিএনসিসি প্রশাসক জানান, যেসব স্থানে পিউরিফায়ার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তার অনেকগুলোই অন্য সংস্থার অধীনে। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে সেই জায়গাগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।

দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মো. এজাজ স্বীকার করেন যে সরকারিভাবে নিযুক্ত অনেক ঠিকাদারই বায়ূদূষণের জন্য দায়ী, কারণ তারা নির্মাণকাজ চলার সময় সাইট ঢেকে রাখছেন না। আমরা এখন এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং ব্যবস্থা নেব।'

ঢাকার উদ্বেগজনক বায়ুর মান

ঢাকায় পিএম২.৫ (PM2.5) - যা বায়ুর সবচেয়ে ক্ষতিকর কণা - এর গড় ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ গুণ বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫ কণার মাত্রা সর্বোচ্চ ৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে, যার ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট।

কিন্তু ২০২৩ সালে ঢাকায় এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯২ মাইক্রোগ্রাম।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে দেখা গেছে যে এই দূষণকারী পদার্থের দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন হয়, বাকি অংশ আসে বাংলাদেশের বাইরে থেকে।

গত ২৬ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে 'বাংলাদেশে বায়ু দূষণ: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান' শীর্ষক এক আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়।

দূষণের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে—গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি পোড়ানো, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইটভাটা, খোলা জায়গায় ময়লা পোড়ানো, রাস্তার ধুলা এবং যানবাহনের ধোঁয়া।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয় গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি পোড়ানোর কারণে—২৮ শতাংশ। এতে গ্রামে বসবাসকারী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র (২৪%), ইটভাটা (১২%), বর্জ্য পোড়ানো (১১%), রাস্তার ধুলা (৮%) এবং যানবাহনের ধোঁয়া (৪%)।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ কোনো বাস্তব সমাধান নয়। এটি কেবল মূল সমস্যাটিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা।'

'এত বড় শহরের দূষণ কয়েকটি পিউরিফায়ার দিয়ে কমানো সম্ভব নয়। স্থাপনের আগে এগুলোর কার্যকারিতা, খরচ এবং স্থায়িত্ব আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করা দরকার, বলেন তিনি।'

তিনি বলেন, একটি পিউরিফায়ার আশপাশের খুব ছোট একটি অংশে দূষণ কমাতে পারে, কিন্তু ঢাকার মতো খোলা জায়গায়, যেখানে বাতাস সব সময় চলাচল করে, সেখানে এ ধরনের যন্ত্রের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

'এই পদ্ধতিতে আমার আস্থা নেই। এটা প্রকৃত পরিবেশগত সমাধান নয়।'

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার বাতাসে সিলিকন কণার পরিমাণ অনেক বেশি, যা মূলত নির্মাণকাজের ধুলা থেকে আসে। অন্য দূষণের উৎসের মধ্যে রয়েছে—যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্পকারখানা এবং গাড়ির চাকার ঘর্ষণ।

'ঢাকার অবকাঠামো—উঁচু-নিচু ভবনের বিশৃঙ্খল গঠন—বাতাস চলাচলে বাধা তৈরি করে, এতে করে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়,'—বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খানও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন,  'ঢাকার দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, এসব যন্ত্র কোনও কাজেই আসবে না—বরং টাকা অপচয় হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারত দিল্লিতে একই জিনিস করেছিল, কিন্তু কার্যকর ফল মেলেনি, কারণ বাতাস তো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করে। সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে জোর দেওয়া।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, সিটি করপোরেশন প্রকল্পের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করছে না। পাইলট প্রকল্প ব্যর্থ হলে, তারা আর এই উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাবেন না।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda’s return on Qatar air ambulance

Khaleda Zia reaches Heathrow Airport on the way to Dhaka tomorrow morning

Fakhrul urges BNP supporters to keep roads free, ensure SSC students can reach exam centres

1h ago