অপর্যাপ্ত বাজেট-আবাসন সংকট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দেশের অন্যতম পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বাজেট বৈষম্যের কারণে শিক্ষা, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে নানামুখী সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থী অনুপাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বাজেট কম হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ইউজিসি থেকে জবির জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ ৮০৪ কোটি টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২৭৯ কোটি টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৪৭৯ কোটি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৩৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ তুলনায় জবির বরাদ্দ অপ্রতুল। ফলে অবকাঠামো প্রায় অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

অপর্যাপ্ত বাজেটের প্রভাব সরাসরি পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। সীমিত ক্লাসরুম, পাঠদানের আধুনিক উপকরণের অভাব এবং চরম আবাসন সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষ করে আবাসন সংকট জবির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি আবাসিক হল রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে মাত্র একটি হল, তাও নারীদের জন্য। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এটি একেবারেই অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে উচ্চমূল্যে বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়।

জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া সরকার বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাজেট বৈষম্যের কারণে আমাদের শিক্ষাজীবনে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় আমরা গবেষণা, ল্যাব সুবিধা ও উন্নত ক্লাসরুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাজধানীতে অবস্থিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও জবি অনেক পিছিয়ে। আমি এই বৈষম্যে হতাশ এবং মনে করি এটি আমাদের প্রতি অবিচার। তাই আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়টি ন্যায্য বাজেট বরাদ্দ পাক এবং আমাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হোক।'

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, 'বাজেট কম হওয়ায় আমাদের প্রতিদিনের ক্লাস ও অধ্যয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। হল না থাকায় অনেককে বাইরে বাসা ভাড়া নিতে হয়, যা আমাদের জন্য আর্থিকভাবে চাপের। ইউজিসির কাছে আমাদের অনুরোধ, শিক্ষার্থীর অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হোক।'

বাজেট বৈষম্য প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাজেট বৈষম্যের শিকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ খুবই কম। আমরা চাই, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ হোক, যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা একটি মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ পায়।'

বাজেট বৈষম্যের প্রতিবাদে গত ৬ মে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে তারা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জবির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানান।

জবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড মুনিরা জাহান বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি নিরপেক্ষ, চাহিদাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ নীতিমালা থাকা জরুরি। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী অর্থায়ন পাবে এবং উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বজায় থাকবে।

দীর্ঘদিন এই বাজেট বৈষম্য চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, সুনাম ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম চরম হুমকির মুখে পড়বে—এমন আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments

The Daily Star  | English

Housing, food may top the manifestos

Panels contesting Ducsu election are signalling key reform priorities in their upcoming manifestos

11h ago