কাকরাইল মোড়ে গণঅনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণঅনশন। ছবি: স্টার

চার দফা দাবিতে গণঅনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ে আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে কাকরাইল মোড়ে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে অনশনে বসেন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে আছে কাকরাইল মসজিদ মোড়।

সাবেক-বর্তমান মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিকেল ৩টার দিকে গণঅনশনের ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমনও।

তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, আমাদের আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই। বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরছি না।'

গতরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন জানান, শুক্রবার জুমার পর তারা গণঅনশনে বসবেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল থেকেই কাকরাইল মোড়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে জবির সাবেক শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।

দুপুর ২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এমনকি সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। জাতীয় বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছেন। কিন্তু এই সরকার আমাদের রক্তের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েও তারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার মেনে নিতে চাইছেন না।

জবি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে দাবি ছিল তিনটি। এগুলো হলো—আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন।

এসব দাবি নিয়ে গত বুধবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় কাকরাইল মোড়ে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

এরপর শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এবং জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা না করে তারা ফিরবেন না। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার নিশ্চিত করাও দাবির অন্তর্ভুক্ত করেন তারা।

পরে সেদিন রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার দিকে বোতল ছুঁড়ে মারাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়।

গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। তারা বিকেলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় 'শাটডাউন'র ঘোষণা দেন।

রাতে আলোচনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন শিক্ষা উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসায় দীর্ঘসময় বৈঠক করলেও কোনো সমাধান আসেনি।

অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে 'জবি ঐক্যের' পক্ষ থেকে 'শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়েই অবস্থান করবেন বলেও জানান তিনি।

রইছউদ্দীন বলেন, আমরা সরকারের কাছে আমাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মেরেছে, কিন্তু আমাদের অধিকারের বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। এমনকি ৩৫ ঘণ্টা পার হলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি প্রশাসন। সরকার থেকে কোনো বার্তা আসেনি।

'দাবি আদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাল জুমার পর গণঅনশন শুরু করবেন। এতে সাবেক ও বর্তমান জবিয়ানদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।'

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে পুলিশ কর্তৃক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস পালনের ঘোষণাও দেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

NCP to announce 'July manifesto' on Aug 3: Nahid

Central NCP leaders held a rally in Bogura today as part of their month-long "July March to Build the Nation" rally

1h ago