ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য টানাপোড়েন কমাতে চায় বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও উভয় দেশের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন আর বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ।

'আমরা কোনো ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেব না,' মঙ্গলবার সচিবালয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ কথা বলেন।

এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ চারটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর ভারত সরকার বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে।

এরপর ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

চীনের পর ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

'আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে যাতে আর কোনো উত্তেজনা না বাড়ে—আমরা পাল্টা পদক্ষেপ নেব না,' বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বাণিজ্য সচিব-পর্যায়ের বৈঠকের অনুরোধ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।

ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদেরই নয়, তাদের ব্যবসায়ীদেরও প্রভাবিত করছে।

'তাই, আমরা একসঙ্গে বসে একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করব,' বলেন মাহবুবুর রহমান।

বৈঠকে উপস্থিত একজন ব্যবসায়ী জানান, বকেয়া চালানগুলো পাঠাতে তিন মাসের জন্য স্থলবন্দর ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে অবিলম্বে ভারত সরকারকে চিঠি দিতে তিনি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন।

ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য স্থলবন্দর ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গত ১০ মাসে বাংলাদেশ এই পথ দিয়ে তিন দশমিক পাঁচ লাখ টন পণ্য আমদানি করেছে, কারণ সমুদ্রপথ ব্যবহার করে ব্যবসা করা ব্যয়বহুল।

অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভারতের সঙ্গে হয় এলসি, চুক্তি পদ্ধতি অথবা অগ্রিম পরিশোধ পদ্ধতির মাধ্যমে বাণিজ্য করছে।

সুতরাং, বকেয়া চালানগুলো যদি সরবরাহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধি সরকারকে সর্বোচ্চ স্তর থেকে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাণিজ্য সচিব-পর্যায়ের বৈঠক ভারতের মানসিকতা বুঝতে সাহায্য করবে। দ্রুততম সময়ে বাণিজ্য বাধা অপসারণ না হলে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ এক দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং নয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।

বাংলাদেশ ভারত থেকে শিল্প কাঁচামাল, গার্মেন্টস সামগ্রী, কাপড়, খাদ্য, তুলা, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, কৃষি পণ্য, চাল, প্রোটিন সামগ্রী এবং শাক-সবজি আমদানি করে।

একইভাবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, বিশেষত পোশাক সামগ্রী ও কৃষি পণ্যের জন্য। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ সার্কের দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা উপভোগ করে আসছিল।

Comments

The Daily Star  | English

BGMEA wants 3-month window from India to clear pending shipments

The association urges the interim government to send a letter to India seeking the opportunity

3h ago