টানা বৃষ্টিতে ভিজে কালো হচ্ছে সোনালি ধান, বিপাকে কৃষকেরা

টানা বৃষ্টিতে প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান মাড়াই করে শুকানোর চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। লালমনিরহাটের গোবর্ধান এলাকায় তোলা ছবি। ছবি: এস দিলীপ রায়

টানা নয় দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের কৃষিকাজ। মাঠ থেকে কেটে আনা ধান মাড়াই ও শুকাতে না পারায় অনেক কৃষকের সোনালি ধান পচে কালো হয়ে গেছে। ফলে চাষের খরচ তুলে আনা নিয়েই শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা।

ধান কাটার পর দ্রুত মাড়াই ও রোদে শুকানো জরুরি হলেও গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকেই জমি থেকে ধান কেটে বাড়িতে আনলেও তা মাড়াইয়ের পর রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে পারছেন না।

গত ১৩ মে মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের কৃষক শাহাবুল হক (৫৫) তিন বিঘা জমির ধান কেটে আনেন বাড়িতে। সেদিন রাত থেকেই শুরু হয় টানা বৃষ্টি।

শাহাবুল জানান, বৃষ্টির কারণে ধান মাড়াই করতে পারেননি। পরে মাড়াই করলেও রোদ না থাকায় তা শুকানো সম্ভব হয়নি।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুঞ্জে রাখা সোনালি ধান এখন কালো হয়ে গেছে। এসব ধান থেকে ভালো মানের চাল পাওয়া যাবে না, কম দামে বিক্রি করতে হবে। দিনের বেলা ঘণ্টাখানেক রোদ থাকলেও আবার বৃষ্টি নামে।'

একই চিত্র লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চরগোবর্ধান গ্রামেও। এই গ্রামের কৃষক সুরুজমিয়া (৬০) জানান, তার চার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেলে তিনি সেগুলো কেটে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তবে মাড়াইয়ের পর রোদ না থাকায় ধান শুকানো সম্ভব হয়নি।

ছবি: এস দিলীপ রায়

তিনি বলেন, 'জ্যৈষ্ঠ মাসে এমন আবহাওয়া আগে কখনো দেখিনি। এই সময়টায় প্রচণ্ড রোদ থাকে, আমরা ব্যস্ত থাকি ধান কাটা-মাড়াই আর শুকানোর কাজে। কিন্তু এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।'

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধ্যপুর গ্রামের কৃষক দীনেশ চন্দ্র সেন (৭০) ডেইলি স্টারকে বলেন, পুঞ্জে রাখা সোনালি ধান কালো হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তিনি খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। দশ বিঘা জমির মধ্যে চার বিঘা জমির ধান কেটে পুঞ্জে রেখেছেন। আবহাওয়া ভালো হলে মাঠে থাকা বাকি ধান কাটবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় এ বছর ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হলেও মাত্র ৪৫ শতাংশ ধানের মাড়াই শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির সময়ে ধান পুঞ্জে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। সঠিকভাবে শুকাতে না পারলে ধান কালো হয়ে যায় এবং চালের মানও খারাপ হয়। আবহাওয়া আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে অনুকূলে এলে কৃষকেরা পুরোদমে বাকি ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

1d ago