হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিল করেছে এবং বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছে।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি ও রয়টার্স।

বর্তমানে ওই হার্ভার্ডের ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আগত।

এর আগে, গত মাসে 'প্রশাসনের কথা মতো কাজ না করলে' বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিলের হুমকি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি, হার্ভার্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দও বাতিল করে সরকার।  

প্রশাসনের সর্বশেষ এই উদ্যোগকে 'বেআইনি' বলে অভিহিত করেছে হার্ভার্ড এবং এর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাজারো শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেছে, এই পদক্ষেপে ক্যাম্পাস ও সামগ্রিকভাবে আমেরিকা, উভয়ই ক্ষতির শিকার হবে।

এক শিক্ষার্থী এএফপিকে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে 'আতংক' বিরাজ করছে।

নানা কারণে হার্ভার্ডের ওপর রেগে আছেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: এএফপি

সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে অবস্থিত এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। হার্ভার্ড কিছু বিদেশি ভিসাধারী শিক্ষার্থীর তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়।

ট্রাম্পের দাবি, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদিবিদ্বেষ ও উদার 'ওক' চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করে। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ভর্তি, কর্মকর্তা ও কর্মী নিয়োগে সরকার নজরদারি করবে। কিন্তু এসব দাবি মানতে রাজি হয়নি হার্ভার্ড।

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার সক্ষমতা হারিয়ে বড় আকারে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে হার্ভার্ড।  প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন বাবদ লাখো ডলার উপার্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডকে গতকাল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম একটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, 'হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর (সেভিস) প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং এই  সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।'

মূলত এই সেভিস নিবন্ধনের মাধ্যমেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার অনুমোদন পেয়ে থাকে।

ইতোমধ্যে ট্রাম্প সরকারের কিছু শাস্তিমূলক উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে হার্ভার্ড। বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্পের সর্বশেষ এই পদক্ষেপকে 'বেআইনি' বলে অভিহিত করে। 

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, 'আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদরা যাতে কোনো বাধা ছাড়াই হার্ভার্ডে আসা অব্যাহত রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।'

শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা ও সমর্থন জোগানোর বিষয়টিও জানিয়েছে হার্ভার্ড। 

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম। ফাইল ছবি: এএফপি
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম। ফাইল ছবি: এএফপি

'এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড সম্প্রদায় ও আমাদের দেশের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ এবং এতে শিক্ষা ও গবেষণায় হার্ভার্ডের ভূমিকার অবমাননা করা হয়েছে'।

এপ্রিলে ট্রাম্প হুমকি দেন, সরকারের দাবি না মানলে হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে। সরকার এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু সিদ্ধান্তের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।

নোয়েম তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, 'এপ্রিলের চিঠিতেই আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিলাম। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার বিষয়টি একটি বিশেষ সুবিধা।'

'সব বিশ্ববিদ্যালয়কে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের চাহিদা পূরণ করে চলতে হবে, যার মধ্যে সেভিস প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করার বিষয়টি অন্যতম', যোগ করেন তিনি।

নোয়েম বলেন, 'যেহেতু একাধিকবার অনুরোধ করার পরও আপনারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরকে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করেননি এবং একইসঙ্গে, ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য বৈরি পরিবেশ তৈরি করেছেন, হামাসপন্থি সহানুভূতিকে উসকে দিয়েছেন এবং বর্ণবাদমূলক "বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি" নীতিমালা অবলম্বন করেছেন, যার ফলশ্রুতিতে আপনাদের এই বিশেষ সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।'

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অ্যালিস গোইয়ের এএফপিকে বলেন, এই পদক্ষেপের পর যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছে, তাদের কপালে কি আছে, তা 'কেউ জানে না'।

তিনি বলেন, 'আমরা এইমাত্র খবরটা পেলাম। এখন আমি আমার বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক মেসেজ পাচ্ছি। আর আমার ধারণা সবাই চিন্তিত—কেউ কিছুই জানে না।'

'সবাই কমবেশি আতংকে আছে', যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে অ্যালিস বলেন, 'আমার মনে হয় না মানুষ সেটা করবে। আমি আশা করব বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চলবে।'

এই সিদ্ধান্ত হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত একাডেমিক বছরে সেখানে ৬ হাজার ৭০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল, যা শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যার ২৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে দ্রুত এই খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ও হতাশা তৈরি করে, যাদের ভবিষ্যৎ হঠাৎ করে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

1h ago