হাটে গরুর ছড়াছড়ি, ক্রেতা কম

ছবি: স্টার

কোরবানির ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও রংপুর বিভাগের পশুর হাটগুলো এখনও জমেনি। হাটে দেশি গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তবে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। হাটে ক্রেতা সমাগমের অপেক্ষায় আছেন তারা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রামের কৃষক মোবারক আলী এ বছর কোরবানির জন্য তিনটি গরু লালন-পালন করেছেন। গত শনি ও রবিবার গরু নিয়ে দুটি হাটে যান তিনি। কিন্তু প্রত্যাশিত তিন লাখ টাকা দাম না পাওয়ায় গরু বিক্রি না করে বাড়ি ফিরেছেন।

মোবারক আলী বলেন, 'প্রতিটি গরুর দাম উঠে ৭৫ হাজার টাকা। এই দামে বিক্রি করলে আমার কোনো লাভ থাকবে না। গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে গরু পালতেও খরচ অনেক বেশি হয়েছে।'

একই হাটে গরু নিয়ে আসা দুড়াকুটি গ্রামের মেহের আলী জানান, বিক্রির জন্য তিনি দুটি গরু এনেছিলেন। আশা ছিল প্রতিটি গরু ৮০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করবেন। তবে ক্রেতা কম থাকায় একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং অন্যটি ফেরত নিয়ে গেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'গত বছর একই রকম গরু ৭০-৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম।'

এ বছর সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরু তেমন আসেনি। ফলে হাটগুলোতে দেশি গরুর ভরপুর সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। তার পরও খামারিরা আশানুরূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

দুড়াকুটি পশুরহাটের ইজারাদার হায়দার আলী জানান, 'ক্রেতার সংখ্যার তুলনায় সাত-আট গুণ বেশি গরুর সরবরাহ আছে। বাইরের পাইকাররাও তেমন আসছেন না। ফলে খামারিরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে গরু বিক্রি করছেন। তবে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।'

ঢাকার পশুর পাইকার সহিদুল ইসলাম জানান, 'এ বছর ঢাকার হাটগুলোতেও দেশি গরুর ভালো সরবরাহ রয়েছে। চাহিদা কম থাকায় বাইরে থেকে গরু আনার কোনো পরিকল্পনা নেই। গত বছর উত্তরাঞ্চল থেকে প্রায় দেড় হাজার গরু এনেছিলাম।'

কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর হাটে চারটি গরু নিয়ে এসেছিলেন চরের কৃষক খলিল মিয়া। এর মধ্যে দুটি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, 'আশা ছিল প্রতিটি গরু এক লাখ টাকা করে বিক্রি করব। ভালো দাম পেলে বাকি দুটো বিক্রি করব।'

রংপুরের বুড়িরহাট হাটে ছয়টি ছাগল নিয়ে আসা কৃষক দিলবর হোসেন টাকার অভাবে তিনটি ছাগল ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, 'আশা ছিল প্রতিটি ছাগল ১৫-১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করব, কিন্তু সেই দাম মেলেনি।'

একই হাটে আসা খামারি আতিয়ার রহমান জানান, কোরবানির জন্য তিনি ১৫টি গরু প্রস্তুত করেছেন। তবে এখনও একটিও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, 'এই দামে গরু বিক্রি করলে আমার লোকসান হবে। গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে, অথচ হাটে ক্রেতা নেই।'

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের আট জেলায় এ বছর প্রায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অথচ চাহিদা মাত্র ১৪ লাখ ১২ হাজার পশুর। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক বেশি।

রংপুর বিভাগের প্রাণিসম্পদ পরিচালক ডা. আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন হাটগুলোতে পশুর সরবরাহ অনেক বেশি। তবে ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়ছে। শেষ দিকে বাজার জমলে চাষি ও খামারিরা আশানুরূপ দাম পেতে পারেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Digital dreams, disconnected realities

A deep-rooted divide in access to devices, internet connectivity, and digital literacy separates rural communities from urban counterparts

15h ago