ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ২৭ ফিলিস্তিনি নিহতের পর আজ বন্ধ থাকছে ত্রাণ বিতরণ

জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

গাজায় ত্রাণ বিতরণে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ও নবগঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনকে (জিএইচএফ) দায়িত্ব দেয় ইসরায়েল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির ঘটনায় ২৭ জন নিহতের পর আজ বুধবার বন্ধ থাকছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। জিএইচএফের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য যেসব রাস্তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সেগুলোকে এখন 'যুদ্ধকবলিত এলাকা' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ত্রাণকেন্দ্র-বিতর্ক

গতকাল মঙ্গলবার রাফায় জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের ওপর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা গুলি চালায়।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখে ইসরায়েল। সম্প্রতি, জিএইচএফ'র মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

ট্রাকে করে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ প্রবেশ করছে। ছবি: রয়টার্স
ট্রাকে করে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ প্রবেশ করছে। ছবি: রয়টার্স

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের দাবি, গাজার জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।

আজ বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক ত্রাণের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে ভোট হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবে যথারীতি ভেটো দেবে স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।

জিএইচএফ জানিয়েছে, আজ বুধবার তাদের ত্রাণকেন্দ্রগুলো মেরামত, পুনর্বিন্যাস ও উপযোগিতা বাড়ানোর কাজ পরিচালনা করা হবে। এ কারণে সেগুলো বন্ধ থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সেগুলো আবার চালু হবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ত্রাণকেন্দ্র 'সাময়িকভাবে' বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বন্ধ থাকার সময়ে কেউ যাতে ত্রাণকেন্দ্রের দিকে না যায় তা নিশ্চিত করতে হুশিয়ারিও দেয় সেনাবাহিনী।

তারা বলছে, ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তাগুলো 'যুদ্ধকবলিত এলাকা' হিসেবে বিবেচিত হবে।

এক সপ্তাহ আগে জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের তহবিলের উৎস ও লক্ষ্যমাত্রা স্বচ্ছ নয়। মূলত এসব কারণে জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রধান ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থা জিএইচএফ'র সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি।

সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে—ত্রাণ বিতরণ নয়, ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যেই এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার জিএইচএফ'র ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ২৭ জন নিহতের পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ওই ঘটনাকে 'গ্রহণযোগ্য নয়' বলে মন্তব্য করেন।

জিএইচএফ'র ত্রাণ প্যাকেজ সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়া করে আগাতে থাকা বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি ছুঁড়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—এই অভিযোগ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও জিএইচএফ উভয়ই অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে।

ত্রাণকেন্দ্র যেন এক ফাঁদ

জিএইচএফ'র ত্রাণকেন্দ্রের কাছে রাফার আল-আলম মোড়ে রাঈম আল-আখরাস নিহত হন। তার স্বামী মোহামেদ জিদান গণমাধ্যমকে বলেন, 'প্রতিদিন নিরস্ত্র মানুষ' মারা যাচ্ছে।

'এটি কোনো মানবিক ত্রাণ নয়—এটি একটি ফাঁদ।'

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বয়ান হলো, তারা কোনো গাজাবাসীকে ত্রাণ নেওয়া থেকে বিরত রাখছে না।

ইসরায়েলের হামলার পর এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের হামলার পর এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি দেফরান জানান, ইসরায়েলি সেনারা সন্দেহজনক মানুষের দিকে গুলি চালিয়েছে, তারা 'এমনভাবে এগিয়ে আসছিলেন, যা সেনাদের প্রতি বিপদের হুমকি তৈরি করেছে।'

'ঘটনার তদন্ত চলছে,' যোগ করেন তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ফলকার তুর্ক জানান, বেসামরিক মানুষের ওপর এ ধরনের হামলা 'বিবেকহীন' কাজ। এতে 'আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধাপরাধবিরোধী আইনের বড় আকারে লঙ্ঘন' হয়েছে।

সম্প্রতি, হামাসকে পরাজিত করার চূড়ান্ত লক্ষ্য হাতে নিয়ে গাজায় হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

গত ১৮ মার্চ থেকে তীব্রতর হামলা শুরুর পর চার হাজার ২৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৫১০ জন। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

গত মঙ্গলবার ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ২৭ জন নিহতের পাশাপাশি পৃথক ঘটনায় আরও ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এদিকে, গাজার উত্তরাঞ্চলে তিন সেনা হারিয়েছে ইসরায়েল। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ নিয়ে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৪ জন।

তবে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজ'র প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ৮৬১ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

2h ago