৪ বছরের মধ্যে কোরবানির পশু বিক্রি সর্বনিম্ন, কারণ কী

স্টার ফাইল ফটো/পলাশ খান

এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহাতে কোরবানির পশুর বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন পশু কোরবানি হয়েছে।

কিন্তু এভাবে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ কী?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এবার পশু বিক্রি কমেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ কম এবং গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ ইমরান বলেন,  প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে কোরবানি মৌসুমে গরু বিক্রির একটি চিত্র পাওয়া যায়। বছরে যে পরিমাণ পশু জবাই করা হয় তার প্রায় ৪০ শতাংশ কোরবানিতে।

তিনি বলেন, 'অর্থনীতি ও রাজনৈতিক কারণে এ বছর বিক্রি কম হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বড় গরুর চাহিদা কম ছিল।'

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এ বছর পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু ছিল। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ছাগল ও ভেড়া কোরবানির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ কম।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াও এ বছর কোরবানির সংখ্যা কমার একটি কারণ বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এখনও সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব তথ্য হাতে আসার পর কোরবানিতে পশু বিক্রি কমার কারণ নিয়ে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৫৯ শতাং হয়েছে, এপ্রিলে যা ছিল ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অন্যদিকে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।

মে মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও টানা ২৭ মাস ধরে ৯ শতাংশের ওপরে আছে। এতে পরিবারের ব্যয় মেটাতে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ অব্যাহত রয়েছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কমিয়েছে। এতে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে কোরবানির পশু বিক্রির ওপর।

তাছাড়া, যাদের একাধিক কোরবানির সামর্থ্য আছে, তারা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় অর্থ সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকেছেন।

তিনি বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে।

রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত অনেক ব্যক্তি, যারা সাধারণত বেশি পশু কোরবানি দেন, তারা হয় বিদেশে আছেন অথবা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে পশু কোরবানির সংখ্যা কমে গেছে, বলেন তিনি।

৩৩ লাখ ১০ হাজার পশু অবিক্রিত

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এ বছর প্রায় ৩৩ লাখ ১০ হাজার পশু অবিক্রিত রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা বছর বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এসব পশু বিক্রি করা বলে আশা করা হচ্ছে।

সবচেয়ে কম কোরবানি সিলেটে

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে কম কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে, সেখানে মোট কোরবানি হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার। এরপর ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৮৩ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে ২৩ লাখ ২৪ হাজার পশু এবং ঢাকা বিভাগে ২১ লাখ ৮৫ হাজার কোরবানি হয়েছে।

গত বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছিল ঢাকা বিভাগে, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে।

Comments

The Daily Star  | English

NBR traces Tk 40,000cr in suspected laundered assets abroad

The revelation came from the Central Intelligence Cell of the tax administrator

3h ago