অভিসার, বিরহ আর ভোগান্তির দিন আনা বর্ষার শুরু

বাংলার ঋতুচক্রে প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। এর ভেতর বর্ষার আছে আলাদা আবেদন। ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগানো বর্ষা ঋতুর প্রথম দিবস আজ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে—আজ রোববার আষাঢ়ের শুরুর দিন থেকে আগামী পাঁচ-ছয় দিন দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি হতে পারে। সকাল থেকে রাজধানীতে মেঘ-রোদের লুকোচুরি আর দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টি সে আভাসই দিচ্ছে হয়তো।

এ আভাস যদি বাস্তব নাও হয়, দুকূল ভাসানো, পথ উপচানো বৃষ্টি যদি নাও নামে, তাহলেও রবিঠাকুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ গান তো গাওয়াই যায়—'আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে।/আমার ভাবনা যত উতল হল অকারণে॥'

আবহাওয়ার নিরিখে জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস বর্ষা মৌসুম। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণকে বর্ষা ঋতু বলা হয়।

বাংলার ঋতুচক্রে প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। এর ভেতর বর্ষার আছে আলাদা আবেদন। কারণ এই বর্ষাই এনে দিতে পারে অভিসারের গন্ধ। বিরহের আকুতি। সেইসঙ্গে ভোগান্তিও।

বাংলার বর্ষার অবিচ্ছেদ্য প্রতীক হলো বৃষ্টিভেজা কদমফুল। এর সঙ্গে আছে ব্যাঙের ডাক, ইলিশ ভাজা আর বর্ষার গান।

আষাঢ়-শ্রাবণের বাদলভেজা কোমল হাওয়া যেমন সবার তাপদগ্ধ প্রাণে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে পারে, তেমনি এই বর্ষণেই শুষ্ক মাটি হয়ে ওঠে কোমল। নরম মাটি ভেদ করে বীজ থেকে মাথা তোলে সুপ্ত অঙ্কুর। গাঢ় সবুজে ভরে ওঠে চরাচর। সতেজ হয়ে ওঠে গাছের মলিন পাতা।

বাংলার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতেও আছে বর্ষার বৃষ্টির সুদূরপ্রসারী ভূমিকা।

আজ বর্ষার প্রথম দিনে আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হচ্ছে—রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ জায়গায় টানা বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।

এমন বিপুল বর্ষণে গ্রামীণ জনপদে নয়া পানিতে মাছ ধরার উত্তেজনা এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। ঝমঝম করে নেমে পড়া মুষলধারায় ঝাপসা দিগন্ত মনের গহীন থেকে তুলে আনতে পারে গোপন কোনো ব্যাথা। সঙ্গী হতে পারে রবীন্দ্রনাথের বর্ষার কোনো গান। কারণ বর্ষা নিয়ে বাঁধা রবিঠাকুরের গানগুলো এর কথার আবেদন, সুর ও ছন্দের বৈচিত্র্য নিয়ে আমাদের মনের বর্ষাকালের আনাচেকানাচেই ঘুরে বেড়ায়।

তাই বর্ষাকালের মতোই বর্ষার রাগ, গানও ভারতীয় উপমহাদেশে একটা ঘটনা। বাংলা সংস্কৃতিতে বর্ষণমথিত বৈষ্ণব সাহিত্য, পদাবলির প্রভাবও এর একটা কারণ।

এ কারণেই হয়তো আধুনিককালে এই প্রিয় বর্ষাতেই প্রেমিকার সঙ্গে 'মেঘ সফরের' আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পুরোনো ছাতা সারাইয়ের কাজে লেগে পড়েন কোনো প্রেমিক।

বিপরীতে নাগরিক বৃষ্টি এক ভিন্নধারার অভিজ্ঞতার সামনেও দাঁড় করাতে পারে আমাদের। শিল্পী কবীর সুমন তার 'মেঘদূত' শিরোনামের গানে যেমন বলেছেন—'ঘর বেঁধেছে পথের ধারে যাদের দল/তাদের কাছে মেঘ মানেই নোংরা জল/সেই জলেতে বেদম ভিজে একটা লোক/মেঘদূতের নাম রেখেছে আহাম্মক।'

Comments

The Daily Star  | English
DGFI involvement in enforced disappearances

2 years lost, life shattered

He was around 15 when he was picked up, a ninth grader.

9h ago