ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে গ্রেপ্তার পাঁচ শতাধিক

সরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে ইরানে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৩ জুন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইরানজুড়ে এই গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংস্থা হেনগাও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ১১ দিনে ইরানজুড়ে ৫৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইরানের সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের বিবৃতি এবং হেনগাওয়ের নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে ধরপাকড়ের এই চিত্র উঠে এসেছে বলে জানায় আল মনিটর।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানের কোন প্রদেশে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সেই তথ্যও দিয়েছে সংস্থাটি। খুজেস্তান প্রদেশে ৬৭ জন, তেহরানে ৬৪ জন, ফারসে ৫৩ জন, পশ্চিম আজারবাইজানে ৫১ জন, লোরেস্তানে ৪১ জন, হামাদানে ৩০ জন, রাজাভি খোরাসানে ২৪ জন, কমে ২২ জন, সেমনানে ২১ জন এবং কেরমানে ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়াও, অন্যান্য প্রদেশে আরও বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হেনগাও জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ এবং জনমত প্রভাবিত করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালানোর কয়েক দিন পর ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি এজেয় ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃতদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম গত ১৬ জুন এজেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, 'যদি কেউ জায়নবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সহযোগিতার জন্য গ্রেপ্তার হয়, তবে তাদের বিচার ও শাস্তি দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন অনুযায়ী এটা করা উচিত।'
বিস্ফোরক ও স্টারলিংক ডিভাইস জব্দ
গিলান প্রদেশের পুলিশ সোমবার জানায়, ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরান আক্রমণ করার পর থেকে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার সন্দেহে অন্তত ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গিলানের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কমান্ডার হোসেইন হাসানপুর এক বিবৃতিতে বলেছেন, সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, শত্রুদের সঙ্গে সহযোগিতা করা, সামরিক স্থাপনার কাছে ড্রোন ওড়ানো, অগ্নিসংযোগ, ঘরে বিস্ফোরক তৈরি এবং বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাসানপুর জানান, গিলান প্রদেশে অভিযানের সময় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সরঞ্জাম, যার মধ্যে যোগাযোগ ডিভাইস, বিস্ফোরক ডিভাইস এবং স্টারলিংকের রিসিভারও জব্দ করেছে।
একই ধরনের অভিযানের খবর পাওয়া গেছে ইরানের অন্যান্য এলাকা থেকেও।
যুদ্ধ শুরুর আগে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই জনের মৃত্যুদণ্ড সোমবার কার্যকর করেছে ইরান।
গত সোমবার মোহাম্মদ-আমিন মাহদাভি শায়েস্তেহ নামে ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে তাকে ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
শায়েস্তেহের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি সাইবার নেটওয়ার্ক পরিচালনার এবং লন্ডন-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ইরান ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইরানের শাসকদের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ইরান ইন্টারন্যাশনাল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
একই দিনে মাজিদ মোসায়েবি নামে এক ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তি এবং ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থাকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
Comments