ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুললেও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি আইন উপদেষ্টা

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: স্টার

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন।

দ্য ডেইলি স্টার প্রসঙ্গে তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রমাণ চাওয়া হলে তিনি দিতে পারবেন।

তার দাবি অনুযায়ী, এ ঘটনাটি ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে ঘটেছিল।

এরপর তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে গতকাল এই প্রতিবেদন দাখিলের সময় পর্যন্ত (রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত) তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি।

তখন তিনি বলেন, 'ঘটনাটি হয়তো ২০ বছর আগে ঘটেছিল। তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারছেন না।'

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি মন্তব্য করেন, হয়তো ঘটনাটি জনসমক্ষে উল্লেখ করা উচিত হয়নি এবং বিষয়টি এখানেই বাদ দেওয়া উচিত।

গতকাল সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আমি সাংবাদিকতার কোড অব কনডাক্ট (আচরণবিধি) নিয়ে কথা বলতে চাই। আমার জানা মতে, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো সংবাদপত্রে কোড অব কনডাক্ট নেই। এটা সেলফ রেজুলেশন পৃথিবীর সব বড় বড় পত্রিকার থাকে।'

'সংবাদপত্রে কোড অব কনডাক্ট যে দুইটি পত্রিকার আছে—সেখান থেকে একটা উদাহরণ দিই। ডেইলি স্টারে ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে, চাইলে সমস্ত প্রমাণ দিয়ে দেব—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার (যেহেতু আইন বিভাগের লেকচারার তাই স্পষ্ট করে মনে আছে আমার) খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রচণ্ড আজে-বাজে কথা বলেন। তাকে ন্যাশনাল হিরো বানানো হলো। প্রথম পেজে প্রফেসর নাম দিয়ে নিউজ আসলো। তিনি ছিলেন লেকচারার অথচ লেখা হলো প্রফেসর। প্রত্যেকদিন প্রফেসর লেখা হতো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলায় ছাত্রদল তার পদত্যাগ চেয়েছিল।'

'তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ইউন্যানিমাসলি (সর্বসম্মতিক্রমে) প্রত্যেকে একত্রিত হয়ে ঢাবি থেকে বের করে দিলো, অথচ এই নিউজটি দ্য ডেইলি স্টার ছাপেনি।'

'আমি খুবই সরি যে আমাকে বলতে হচ্ছে, তিনি এত উন্মত্ত মানসিকতার ছিলেন যে, বছর কয়েক আগে আত্মহত্যা করেছেন। এমন একজন মানুষকে হিরো বানিয়েছে ডেইলি স্টার।'

'কিন্তু তাকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব থেকে দেওয়া বের করে দেওয়া হয়, এটা ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম কোনো ব্যক্তিকে সর্বসম্মতিক্রমে বের করে দেওয়ার ঘটনা—সেই নিউজ ছাপেনি ডেইলি স্টার।'

সেমিনারে উপস্থিত দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আপনি ডেইলি স্টারের এই জিনিসটা মাহফুজ ভাইকে (দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক) বলবেন। আমি আপনাকে প্রমাণ দেব, এটা একটা ক্লাসিক স্টোরি হতে পারে।'

'আমার কথা হচ্ছে, ওনারা ভুল দুটি জিনিস ছাপালো কেন? লেকচারারকে প্রফেসর বানিয়ে ফার্স্ট পেজে নিউজ ছাপলো, তাকে যখন বের করে দেওয়া হয়েছে পুরো নিউজটা গায়েব করে দিলো কেন?'

'সাংবাদিকদের কাছে আমার অনুরোধ—সরকারের বিভিন্ন সংস্কারে আপনারা একত্রিত হয়ে যদি কোনো অলটারনেটিভ প্রোপোজাল দেন, এই প্রোপোজালগুলো সরকারের যেকোনো উদ্যোগের চেয়ে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশাকরি আপনারা সেই উদ্যোগ নিবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি সাংবাদিকদের ভেতরেই পক্ষপাত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য তাদের বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।'

সেমিনার শেষে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক আইন উপদেষ্টার কাছে সেমিনারে উল্লেখিত ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান।

তবে তিনি ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি ঘটনার বিস্তারিত মনে করতে পারছেন না।

তার ভাষ্য, 'ঘটনাটি হয়তো ২০ বছর আগে ঘটেছিল এবং ওই লেকচারারের নামের প্রথম অংশ সম্ভবত শফিক ছিল।'

তিনি বলেন, আপাতত তার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।

আইন উপদেষ্টা বলেন, 'হয়তো ঘটনাটি এভাবে প্রকাশ্যে উল্লেখ করা উচিত হয়নি। ওই ব্যক্তি পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছিলেন…'

তিনি ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি এখানেই বাদ দেওয়া উচিত।

তবে দ্য ডেইলি স্টার মনে করে, এই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

পরবর্তীতে দ্য ডেইলি স্টার আইন উপদেষ্টাকে আরও একটি বার্তা পাঠিয়ে ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়। কিন্তু তখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago