ট্রাম্প-মাস্কের বাগযুদ্ধ তুঙ্গে, কী হবে টেসলার?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেসলা সিইও ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি

প্রস্তাবিত বাজেট 'বিগ, বিউটিফুল বিল' নিয়ে সিনেটে চূড়ান্ত ভোটের অপেক্ষায় আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তার এই বিলের তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন এক সময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ইলন মাস্ক।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন মাস্ক। চলতি মাসের শুরুতে এই বিল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিরোধ তৈরি হয়, যা এখন তুঙ্গে।

সেই বিরোধ আরও উসকে দিয়েছেন ট্রাম্প। অর্থের অপচয় রোধে আজ মঙ্গলবার সরকারি দক্ষতা বিভাগকে টেসলা সিইও মাস্কের কোম্পানিগুলোর ভর্তুকি পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

এতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মধ্যে আবারও কথার লড়াই জমে উঠেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ট্রাম্পের এই পরামর্শ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রিপাবলিকান শিবিরের অন্যতম অনুদানদাতা মাস্ক ব্যাপক হারে কর কমানো ও ব্যয় বিলের পুনরায় সমালোচনা এবং এই বিল সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাদের পরাজিত করার প্রতিজ্ঞা করেন, যারা নির্বাচনের সময় সরকারের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

রয়টার্স বলছে, বাজার খোলার আগেই টেসলার শেয়ার ছয় শতাংশের বেশি পড়ে গেছে, কেননা এই বিরোধ মাস্কের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের জন্য নতুন বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তার সম্পদের প্রধান উৎস বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা টেক্সাসে পরীক্ষাধীন রোবোট্যাক্সির সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে।

মার্কিন পরিবহন বিভাগ দেশটিতে যানবাহনের নকশা নিয়ন্ত্রণ করে। টেসলা প্যাডেল ও স্টিয়ারিং হুইল ছাড়াই ব্যাপকভাবে রোবোট্যাক্সি উৎপাদন করতে পারবে কি না, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে মাস্কের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্সের প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি রয়েছে।

সরকারি দক্ষতা বিভাগকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্লাটফর্মে এক পোস্টে লিখেন, 'ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ইলনই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পেয়েছেন। ভর্তুকি না পেলে ইলনকে হয়তো ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হতো।'

'আর কোনো রকেট উৎক্ষেপণ, স্যাটেলাইট বা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন না হলে আমাদের দেশ প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করত। সরকারি দক্ষতা বিভাগকে (ডিওজিই) এই বিষয়গুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। বহু অর্থ সাশ্রয় সম্ভব', বলেন তিনি।

এর প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক তার নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেন, 'আমি আক্ষরিক অর্থেই বলছি, সব বাতিল করে দিন। এখনই।'

ট্রাম্প বলেন, মাস্ক বিরক্ত হয়ে আছেন। কেননা সাম্প্রতিক কর ও ব্যয় বিল থেকে ইভি ম্যান্ডেট হারিয়েছেন তিনি এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, 'তিনি (মাস্ক) এর চেয়েও বেশি কিছু হারাতে পারেন।'

ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও মাস্কের সমালোচনার জবাবে বলেন, এই বিল ঘাটতি বাড়াবে—এই মন্তব্য ঠিক নয় এবং বলেন যে, 'আমি দেশের অর্থনীতি দেখে রাখব।'

জুনের শুরুতে মাস্কের সরকারি চুক্তিগুলো বাতিলের হুমকি দেন ট্রাম্প, যখন কর বিল নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের ঋণকে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দেবে।

এই বিরোধের ফলে টেসলার শেয়ার ১৫০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে এবং বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন যে, নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে স্বচালিত রোবোট্যাক্সির অনুমোদন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা কোম্পানির ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের ভিত্তি।

পরে মাস্ক তার কিছু মন্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং বলেন যে, তিনি 'অত্যধিক দূরে' চলে গিয়েছিলেন, যার ফলে শেয়ার কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।

এ বিষয়ে টেসলার শেয়ারধারী ও স্টক ট্রেডার নেটওয়ার্কের প্রধান কৌশলবিদ ডেনিস ডিক বলেন, 'মাস্ক নিজেকে থামাতে জানেন না। তিনি আবার ট্রাম্পের বিরাগভাজন হচ্ছেন। টেসলার আন্তর্জাতিক বিক্রি অনেক কমে গেছে এবং তিনি যদি মার্কিন ভর্তুকি হারান, তবে দেশীয় বিক্রিও কমে যেতে পারে।'

'মাস্কের ট্রাম্পকে প্রয়োজন, ট্রাম্পের মাস্ককে প্রয়োজন নেই', বলেন তিনি।

আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে সুইডেন ও ডেনমার্কে টেসলার বিক্রি টানা ষষ্ঠ মাসের মতো কমেছে। বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, আগামী বুধবার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ডেলিভারি সংখ্যায় তারা শেয়ার পতনের বিস্তারিত তুলে ধরবে।

স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি

কয়েক সপ্তাহ শান্ত থাকার পর গত শনিবার পুনরায় বিতর্কে যোগ দেন মাস্ক, যখন সিনেট ওই বিলের আলোচনা শুরু করে। সেসময় এক্সে এক পোস্টে এই বিলকে 'সম্পূর্ণ পাগলাটে ও ধ্বংসাত্মক' বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল মাস্ক বলেছেন, 'যেসব কংগ্রেস সদস্য সরকারের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, আর পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের উচিত লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকা! আর আমি যদি এই পৃথিবীতে আমার শেষ কাজ হিসেবেও কিছু করি, তাহলেও নিশ্চিত করব যে- তারা যেন আগামী বছর প্রাথমিক বাছাইয়ে হেরে যান।'

'এই বিশাল ব্যয় প্রমাণ করে যে, আমরা একটি একদলীয় দেশে বাস করি- দ্য পর্কি পিগ পার্টি' উল্লেখ করে আরেকটি পোস্টে তিনি বলেন, এই অযৌক্তিক খরচের বিল পাস হলে পরদিনই 'আমেরিকা পার্টি' নামে একটি দল গঠন করা হবে।

রয়টার্স বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুই মহারথীর 'বাগযুদ্ধ' নাটকীয় মোড় নিচ্ছে, কেননা ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনী প্রচারণায় এই বিলিয়নিয়ার প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন এবং সরকারের বিতর্কিত দক্ষতা বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

মাস্ক যুক্তি দিয়েছেন যে, এই আইন জাতীয় ঋণকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে এবং তিনি সরকারি দক্ষতা বিভাগের মাধ্যমে যে সাশ্রয় করেছিলেন, সেই অর্জনকে মুছে দেবে।

মাস্ক কংগ্রেসে কতোটা প্রভাব ফেলতে পারবেন বা তার মতামত বিল পাসের ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের এই ক্রমবর্ধমান বিরোধ ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন রিপাবলিকানরা।

 

Comments

The Daily Star  | English

NBR traces Tk 40,000cr in suspected laundered assets abroad

The revelation came from the Central Intelligence Cell of the tax administrator

38m ago