ইতালি কীভাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপে!

Italy Cricket Team

গত দুই ফুটবল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি ইতালি। তারপরও ইতালি আর বিশ্বকাপ একসঙ্গে উচ্চারণ করলে, আপনি ফুটবলের ছবিই কল্পনা করবেন। ফুটবলের দেশ বলে তারা পৃথিবীর এই অঞ্চলে পরিচিত। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপ আর ইতালি, দুয়ে দুয়ে চারের মতো কি এত সহজে মেলানো যায়?

আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে ইতালির নাম খুঁজে পেতে হলে যেতে হয় একেবারে ৩২ নাম্বার পর্যন্ত। গত বছর মনফালকন নামের এক শহরে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন সেখানকার মেয়র। এক জরিপমতে অংশগ্রহণকারী বিবেচনায় ইতালির জনপ্রিয় দশ খেলার মধ্যেও নেই ক্রিকেটের হদিস। সেই দল যখন ২০২৬ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ফেলে, তখন বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন আসে, কীভাবে!

প্রথমত যে পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বকাপের গন্তব্যে এসেছে ইতালি, সেটি দেখে নেওয়া যাক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত আসর থেকেই দল সংখ্যা করা হয়েছে বিশ। নিঃসন্দেহে যা সহযোগী দেশগুলোর জন্য সুখবর হয়ে এসেছে।

ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিশ্বকাপের বিমান ধরতে ইতালি প্রথমে ইউরোপ সাব-রিজিওনাল কোয়ালিফায়ারে দশ দলের গ্রুপে খেলেছে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আজ্জুরিরা উঠেছে ইউরোপ রিজিওনাল ফাইনালে। যার অর্থ হচ্ছে- পাঁচ দলের মধ্যে আপনি সেরা দুইয়ে থাকতে পারলেই বিশ্বকাপের আসন পাক্কা। কিন্তু ইতালির সামনে ছিল বিশ্বকাপের নিয়মিত দল স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো প্রতিপক্ষ। শেষমেশ অবিশ্বাস্যভাবে স্কটিশদের ১২ রানে হারিয়ে দেয় ইতালি। এবং ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্ব থেকে ডাচদের সঙ্গে তারা বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে।

Italy

ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য খেলোয়াড়দের প্রশংসা তো করবেনই। তবে বাছাইপর্বের আগের কিছু গল্পে ফেরা যাক এবং ইতালিয়ান ক্রিকেট ফেডারেশনের জন্যও কিছু বাহবা বরাদ্দ রাখুন।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বকে সামনে রেখে চলতি বছরের মার্চে নতুন কোচ নিয়োগ দেন ইতালির ক্রিকেট কর্তারা৷ কানাডার সাবেক অধিনায়ক ও অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটার জন ডেভিসনকে দেওয়া হয় প্রধান কোচের দায়িত্ব। তার সঙ্গে সহকারী কোচ হিসেবে থাকেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন'ও ব্রায়েন। আধুনিক ক্রিকেটের যুগে পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিসের গুরুত্বও অনুধাবন করতে পেরেছে ইতালির মতো ক্রিকেট দল। তাইতো বাছাইপর্বে তারা অ্যানালিস্ট হিসেবে রেখেছিলেন আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ জাতীয় দলে কাজ করা মহসিন শেখকে।

ইতালিয়ান ক্রিকেট ফেডারেশনের সঙ্গে কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মিল পাওয়া যায়। দেশটির কর্তারা ইতালি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের দলে টানার কাজে নেমে পড়েছিলেন। সবশেষ বাছাইপর্বে যেমন আজ্জুরিদের নেতৃত্ব দিয়েছেন জো বার্নস। যিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৩টি টেস্ট খেলেছেন।

নর্দাম্পটনশায়ার ও ডারহামের হয়ে কাউন্টি খেলা ইমিলিও গে ইতালির জার্সি পরে মাঠে নেমেছেন। বিগ ব্যাশে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলা দুই ভাই হ্যারি মানেত্তি ও বেন মানেত্তি, অস্ট্রেলিয়ায় যাদের বেড়ে উঠা, তারাও ইতালির ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। এছাড়া স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়া দলটির পেসার গ্র‍্যান্ট স্টুয়ার্ট ইংলিশ কাউন্টি কেন্ট ও সাসেক্সের খেলোয়াড়। যার জন্ম হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।

শুধু কি ইতালির বংশোদ্ভূতরা দিন বদলের ছবি এঁকেছেন? ইতালিতে বেড়ে উঠা খেলোয়াড়েরাও সমানতালে যোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে। থমাস ড্রাকা যেমন গত আইপিএলের নিলামে নাম লিখিয়ে শিরোনামের কারণ হয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এই পেসার কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পেয়েছেন৷

এবার তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে গর্বভরে মাঠে নামবেন ইতালির জার্সি পরে। স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ইতালি থাকবে বিশ্বকাপে। আপনার কেন, ব্যাপারটা হজম হতে ড্রাকাদেরও নিশ্চয়ই সময় লাগবে!

Comments

The Daily Star  | English

AL govt’s secret surveillance state

From snooping devices carried in backpacks to locate people through their phones to a massive infrastructure that can intercept even end-to-end encryption from a central command centre, the Awami League government had been on an increasingly aggressive trajectory towards building a powerful surveillance state. 

13h ago