কোয়াবের এজিএমে ‘নজিরবিহীন’ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক 

গঠনতন্ত্র সংশোধনী এবং সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য নির্বাচনের প্রস্তুতি সামনে রেখে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (কোয়াব) মঙ্গলবার তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেছে। এই বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রাক্তন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যে সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন বলছেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। তার অভিযোগ সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের প্রভাবে নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত।

আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সকল বর্তমান ও প্রাক্তন জাতীয়, প্রথম-শ্রেণীর এবং লিস্ট এ ক্রিকেটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল। নতুন সংশোধনীতে এই অধিকার শুধুমাত্র বর্তমান প্রথম-শ্রেণীর এবং সকল জাতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তবে প্রাক্তন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটাররা এক লক্ষ টাকা দিয়ে আজীবন সদস্য হতে পারবেন কিন্তু তারা ভোট দিতে বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

কোয়াবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল অভিযোগ করেছেন যে এই 'নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত' প্রাক্তন জাতীয় অধিনায়ক তামিম ইকবালের 'প্রভাব' এর কারণে নেওয়া হয়েছে। যদিও অ্যাড-হক কমিটির আহবায়ক সাবেক ক্রিকেটার সেলিম শাহেদ নাকি সকল প্রাক্তন খেলোয়াড়কে স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন।

দেবব্রত মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সে [তামিম] সভায় বলেছিল যে সে অনেক ক্রিকেটারের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাই সবার তার সিদ্ধান্তই বিবেচনা করা উচিত।'

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এজিএম-এর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেবব্রত। তার মতে যথেষ্ট সদস্যের উপস্থিতিও ছিল না এই সভায়,  'আমাদের প্রায় ১০০০ সদস্য আছে। একটি এজিএম-এর জন্য কমপক্ষে ৩০০ সদস্যের উপস্থিত থাকা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এই সভা মাত্র ৩০-৩৫ জন সদস্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে... এর কারণে (প্রাক্তন প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়দের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত) সদস্য সংখ্যা অনেক কমে যাবে।'

যোগাযোগ করা হলে তামিম এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন এবং এই প্রতিবেদককে আহবায়ক সেলিমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন, 'এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি আমি নই। আপনার অ্যাড-হক কমিটির [সেলিম] শাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত এবং তিনি আপনাকে আরও ভালো উত্তর দেবেন।'

পরে সেলিম নিশ্চিত করেন তিনি 'সবাইকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে চেয়েছিলেন' কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এজিএমের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। আর তিনি নিজে এই বিষয়ে ভোটদানে বিরত ছিলেন, 'আমাদের ক্রিকেট ১৯৭২-৭৩ সালে শুরু হয়েছিল, এবং তখন থেকে যারা প্রথম-শ্রেণী, প্রিমিয়ার লিগ বা সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, আমার মনে হয় তাদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার অধিকার থাকা উচিত।'

সেলিম আরও যোগ করেন, 'তারা [প্রাক্তন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটাররা] আজীবন সদস্যের মানদণ্ড পূরণ করে আসতে পারবেন... তারা সদস্য হতে পারবেন কিন্তু ভোটাধিকার থাকবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ এটাই চায়।'

সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন কোয়াবে 'গত ১৫ বছরে কোনো অডিট রেকর্ড নেই', এই সময়ে এটি নিষ্ক্রিয় ছিল, এবং এখন নির্বাচিত একটি কমিটির কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে।

সেলিম আরও জানান, 'সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো আমাদের কাছে সদস্যদের কোনো তালিকা নেই। যারা সদস্যপদ ফি পরিশোধ করবেন তারাই থাকবেন, এবং বাকিরা বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী পরে যোগদান করবেন। সবকিছু সংস্কার করার পর আমাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।'

অ্যাড-হক কমিটির সদস্য নিয়ামুর রশিদ রাহুল বলেন, তারা সেপ্টেম্বর নির্বাচনের জন্য ১৫ই আগস্টের মধ্যে সদস্যপদ সাবস্ক্রিপশন চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে বিভিন্ন ক্রিকেটার ক্যাটাগরির জন্য একটি ফি কাঠামো চালু করা হবে, 'গত ১৫ বছরে এই সংগঠনে কিছুই করা হয়নি। এটি আবর্জনার মতো ছিল। আমরা সবার সম্মতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি... আমাদের একটি প্রতিনিধি সংস্থা নির্বাচন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'

সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলির মধ্যে একটি নিয়ম ছিল যা বিসিবি পরিচালক বা চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের কোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ করা থেকে বিরত রাখবে – যদিও তাদের ভোটাধিকার থাকবে।

এদিকে, কোয়াব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে তাদের একটি অফিস বরাদ্দ করেছে – এটি তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক ঠিকানা।

Comments

The Daily Star  | English

Industrial output soars, but where are the jobs?

Over the past decade, more and more industries have sprung up across the country, steadily increasing production. But while output rose, factories did not open their doors to more workers.

12h ago