নৈতিক সমাজ তৈরির পথে আমাদের এগোতে হবে: বুয়েট উপাচার্য

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেছেন, 'পুনর্জাগরণের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, নিহত-আহত হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আমাদের সব ধরনের বর্বরতা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা চেয়েছিলাম নৈতিক সমাজ তৈরি করতে, সে পথেই আমাদের এগোতে হবে। তা না হলে এই বলিদান, আত্মাহুতির কোনো মূল্য থাকবে না।'

তিনি বলেন, 'আমি শুধু মুখে মুখে বলবো, আর সেটা কাজ-কর্মে প্রকাশিত হবে না, তাহলে কিন্তু কোনো লাভ হবে না এবং উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে; আত্মাহুতি দেওয়া বিফলে যাবে। আমরা দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়েছি, তৃতীয়বার আমাদের জন্য সে সুযোগ নাও আসতে পারে।'

'জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি শুধু স্মৃতি হিসেবেই থাকবে না, আজ এখান থেকে সেই প্রতিজ্ঞা আমাদের করতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ উপলক্ষে গত বুধবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে বুয়েটের ঘটনাবলীর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বুয়েট উপাচার্য বলেন, 'গত কয়েক দিন আগে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করার পরে প্রতিবাদ করার জন্য বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল, যা যথাযথভাবে প্রতিবাদ করারই কাজ কিন্তু প্রতিবাদে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়।'

তিনি বলেন, 'প্রতিবাদের বিষয়ে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করব, কিন্তু সেটা নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে নয়। আশা করি, আমরা আবার সেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবো এবং আমাদের যে দায়িত্ব আমরা সেটা নিজ নিজ জায়গা থেকে পালন করব। দেশের উন্নয়নে আমরা সবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করব।'

উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, 'বিগত ৭৫ বছরে পাঁচটা গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে ঘটে নাই। জনগণের জীবন যখন শুকনো পাতার মতো হয়ে যায়, অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন, শোষণ হয়, তখন তার ফলে একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল তৈরি করে। সকল গণঅভ্যুত্থানে এটাই বারবার ঘটতে দেখা যায়।'

'১৪ জুলাই যখন কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলা হচ্ছিল, তখন বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, এখানে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে, দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। ১৫ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা করা হয় এবং ১৬ জুলাই যখন আবু সাঈদকে অদম্য সাহসিকাতার সঙ্গে দুই হাত সম্প্রসারিত করে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে মৃত্যুবরণ করতে দেখি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম বাঁধ ভেঙে গেছে। এই বাঁধ ভাঙার ঘটনা আমরা ১৯৭১ সালেও দেখেছি। ইতিহাস বলে কোনো দেশের সরকার যখন সমগ্র জনগণকে শত্রু বিবেচনা করে, তখন সেই সরকার আর টিকে থাকতে পারে না।'

অনুষ্ঠানে বুয়েটের অনুষদের ডিন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

শেষ পর্যায়ে ছোট পরিসরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Industrial output soars, but where are the jobs?

Over the past decade, more and more industries have sprung up across the country, steadily increasing production. But while output rose, factories did not open their doors to more workers.

9h ago