গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ কবর থেকে তোলা হলো

Gopalganj
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়েছে।

এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোমানা রোজী এই তিনজনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আদালতের আদেশে দাফন করার পাঁচ দিন পর তাদের মরদেহ তোলা হলো।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালতের আদেশে রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল মোল্লার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'

এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দিনব্যাপী সংঘর্ষে দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল মোল্লা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

পরবর্তীতে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দীপ্তর শেষকৃত্য ও বাকি তিনজনের দাফন সম্পন্ন হয়।

শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গুলিবিদ্ধ আরেক ব্যক্তি রমজান মুন্সী। ময়নাতদন্তের পর তাকে দাফন করা হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রথম দফায় পৌরসভার গেটপাড়া কবরস্থান থেকে রমজান কাজী ও ইমন তালুকদারের মরদেহ তোলা হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সী ও রন্টি পোদ্দার উপস্থিত ছিলেন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ দস্তগীরের উপস্থিতিতে দুপুর ৩টার দিকে পারিবারিক কবরস্থান থেকে সোহেল রানার মোল্লা মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এদিকে গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তার আতঙ্কে শত শত মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশ আটটি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে আসামি করা হয়েছে আট হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সারা দিন রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে, রাতে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা গতকাল রোববার তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানান।

টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকার পাঁচ কাহানিয়া, কেরালকোপা, গিমাডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন প্রায় প্রতি রাতে গ্রামগুলোতে পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে।

'আগে কখনো এ রকম দেখিনি। যখন পুলিশের রেইড চলে, তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। ভীষণ ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়,' বলেন তারা।

মো. মারুফ শেখের বাড়ি চরপাড়া ফকির বাড়ি এলাকায়। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। মারুফ রোববার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক দিন পথে নামতে পারিনি। আজ ভয়ে ভয়ে ভ্যান চালাচ্ছি। সিঙ্গিপাড়া টু টুঙ্গিপাড়া মাজার পর্যন্ত সকাল থেকে ভ্যান নিয়ে ঘুরছি।'

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি মাত্র ছয়-সাতজন যাত্রী পেয়েছেন। পথে তেমন লোকজন নেই, বলেন মারুফ।

তিনি আরও বলেন, 'গতকাল (শনিবার) রাত ১০টার দিকে গ্রামে পুলিশ ঢুকেছিল। সেই সংবাদ পেয়ে অনেকেই পালিয়ে গেছেন। আমিও পালিয়েছিলাম। রাত ২টার দিকে আবার ফিরেছি।'

'ধরলে তো ছাড়ছে না। এখন তো আবার অন্য জেলায় চালান করে দিচ্ছে। মাগরিবের নামাজের পর পথঘাট সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

বাঘেরকুল, দড়িয়ারকুল, বালাডাঙ্গা ও বালাগাতি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোনো পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।

আতঙ্কিত ১৫-২০ জন নারীকে স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

তাদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, 'গতকাল রাত ৯টার দিকে বাড়িতে পুলিশ এসেছিল আমার স্বামীকে খুঁজতে। আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ও আমি ছাড়া বাড়িতে কেউ ছিল না। তারা আমাকে দরজা খুলতে বাধ্য করেন। বিভিন্ন প্রশ্ন করে চলে যাওয়ার আগে আমার স্বামীর অবস্থান জানতে চান। আমি বলেছিলাম, আমার এক আত্মীয় অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।'

'কোনো মামলা বা অভিযোগ না থাকার পরও যদি পুলিশ রাতে বাড়িতে পুরুষ সদস্যদের খুঁজতে আসে, তাহলে কীভাবে নিরাপদ বোধ করব?' প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ওই নারী আরও বলেন, 'সবাই পরামর্শ করে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এখন এখানে এসেছি।'

টুঙ্গিপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই নারীরা আমার বাড়িতে এসেছেন। আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, পারিনি। পরে ওসি সাহেবকে অবহিত করেছি। তিনি বলেছেন, পুরুষ সদস্যদের বাড়িতে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই।'

কারাগারে গত কয়েক দিনে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে ভারপ্রাপ্ত জেলার তানিয়া জামান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই কারাগারটির ধারন ক্ষমতা ৩৬০, কিন্তু বর্তমানে ৮৬৫ জন বন্দি রয়েছেন। সাধারণত ৬০০ এর মতো বন্দি এখানে থাকেন।'

স্থান সংকুলান না হওয়ায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার অনেক আসামিদের শনিবার পিরোজপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার আতঙ্কের ব্যাপারে কথা বলতে একাধিকবার তার কার্যালয়ে গিয়ে এবং ফোন করেও গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষ ও হত্যা মামলায় ৩২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

25 children among 27 killed in Milestone jet crash

Twenty bodies have so far been handed over to their respective families

1h ago