এশিয়া কাপ অনিশ্চয়তায়: চাপে বিসিবি, আর্থিক ক্ষতির মুখে পিসিবি

২০২৫ সালের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আয়োজন ঘিরে অনিশ্চয়তা এখন চরমে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বোর্ডগুলোর মতানৈক্যের জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ২৪–২৫ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এই অনিশ্চয়তা পুরো টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

বর্তমানে এসিসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভি। এশিয়া কাপ থেকে প্রায় ১১৬ কোটি পাকিস্তানি রুপি আয়ের প্রত্যাশা করছিল পিসিবি, যা তাদের ৮৮০ কোটি রুপির বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইসিসি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ছাড়াও এশিয়া কাপের রাজস্ব পিসিবির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু ভারতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানও ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সভার কোরাম নিয়ে তৈরি হয়েছে গুরুতর অনিশ্চয়তা। এসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি বৈধ এজিএম আয়োজনের জন্য কমপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ এবং দশটি পূর্ণ/সহযোগী সদস্য দেশের প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি বার্ষিক সম্মেলনে পিসিবির প্রধান নির্বাহী সুমাইর আহমেদ ঢাকার বৈঠক আয়োজনের পক্ষে জোরালো প্রচেষ্টা চালালেও, বড় ক্রিকেট বোর্ডগুলোর—বিশেষ করে ভারতীয় বোর্ডের—প্রতিরোধের মুখে পড়েন তিনি। ভারত দৃঢ়ভাবে চায়, এজিএম হোক কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে, আর এই দাবির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।

এই জটিলতার কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। খুব অল্প সময়ের নোটিশে ঢাকাকে ভেন্যু হিসেবে অনুমোদন দিয়ে এখন রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়েছে সংস্থাটি। যদিও বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করছে, সিদ্ধান্তটি এসিসির, তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল পরিস্থিতির গভীরতা পুরোপুরি না বুঝেই তড়িঘড়ি করে সম্মতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিসিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'ঘটনাটি এখন পুরোপুরি ভূরাজনৈতিক হয়ে গেছে। বুলবুল ভাই যদি একটু সময় নিতেন, তাহলে এমন জটিলতা হয়তো এড়ানো যেত। এ ধরনের ইস্যুতে সময় নেওয়া কৌশলের অংশ। সম্ভবত অভিজ্ঞতার অভাবেই তিনি এত দ্রুত সম্মতি দিয়েছেন।'

আরেক কর্মকর্তা জানান, 'বিসিবির কিছু পরিচালক ভারতকে অসন্তুষ্ট করতে চাননি, তাই বৈঠক বাতিলের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বুলবুল ভাই বলেছেন, তিনি আগেই কথা দিয়েছেন, তাই এখন পিছু হঠতে পারছেন না।' 

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে পিসিবি চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভি আইসিসি সম্মেলনে অংশ না নিয়ে কাবুল সফরে গেছেন আফগান বোর্ডের সমর্থন নিশ্চিত করতে। কিন্তু ২১ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তান ভারতীয় অবস্থানকেই সমর্থন করছে, অর্থাৎ তারাও ঢাকায় প্রতিনিধি পাঠাবে না।

ফলে, ঢাকার এজিএম বৈঠক যদি বাতিল হয় বা বৈধতা না পায়, তবে সেপ্টেম্বর ১০–২৮ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্ধারিত এশিয়া কাপ আয়োজন পড়বে চরম অনিশ্চয়তায়। আয়োজক হিসেবে ভারত চাইলে পাকিস্তানকে বাদ দিয়েও টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে, তবে তাতে বাণিজ্যিক ও লজিস্টিক পরিকল্পনা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকায় ঢাকার এই এজিএমই এখন পরিণত হয়েছে এশীয় ক্রিকেট বোর্ডগুলোর এক অঘোষিত কূটনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রে, যার পরিণতি নির্ধারণ করে দিতে পারে এশিয়ার ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের বাকি বছরের চিত্র।

Comments

The Daily Star  | English

Why is the stock market rebounding now?

The stock market has bounced back strongly within two months of falling to its lowest in the past five years, thanks to some macroeconomic-level recoveries, including a drop in inflation and the strengthening of the local currency against the greenback.

15h ago