যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পরবর্তী শুল্ক আলোচনা ২৯ জুলাই

রয়টার্স ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

এর আগে, বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআর-এর কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই আলোচনা পুনরায় শুরুর প্রস্তাব দেয়। এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ইউএসটিআর-এর ওয়াশিংটন ডিসি অফিসে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইউএসটিআর শেষ পর্যন্ত ২৯ জুলাই আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করে। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

যদি আলোচনা সরাসরি অনুষ্ঠিত হয়, তবে বাংলাদেশ দল ২৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তবে বৈঠক ভার্চুয়ালি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে বলে জানান সচিব।

এবার বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকরা প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যেতে পারেন। তবে তারা আলোচনায় অংশ নেবেন না, কারণ এটি সরকার থেকে সরকারের মধ্যে আলোচনার ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হবে, বলেন তিনি।

সচিব আশা প্রকাশ করেন, আলোচনার শেষে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার কমাবে, যেহেতু ইতোমধ্যে কিছু দেশের জন্য শুল্কহার কমানো হয়েছে।

যেমন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাপানের জন্য শুল্ক ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।

এছাড়া, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইউএসটিআর-এর সঙ্গে ভালো আলোচনা করেছে এবং প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য কমবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা, গম, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), উড়োজাহাজ ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর লক্ষ্যে, বাংলাদেশ ২০ জুলাই ০.৭ মিলিয়ন টন গম আমদানির জন্য মার্কিন গম রপ্তানিকারকদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ১৪টি বোয়িং বিমান কেনার জন্য উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে।

প্রস্তাবিত শুল্ক চুক্তিতে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, যেন বাণিজ্য নির্বিঘ্ন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার বেসরকারি উদ্যোগ সময়ের অভাবে খুব বেশি অগ্রসর হয়নি বলে জানান ওই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি। তবে নাম প্রকাশ করতে চাননি।

গত ২৩ জুলাই পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে বেসরকারি খাতের নেওয়া যেকোনো উদ্যোগকে তিনি সমর্থন জানাবেন।

যদি বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগে সফল হন, তবে পিআরআই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করবে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন লবিস্ট নিয়োগ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি যদি একজন লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়, তবুও তাতে ইতিবাচক ফল নাও আসতে পারে।

তবুও, বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রে একজন লবিস্ট নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি বাজার, যেখানে স্থানীয় তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা গত বছর ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্কহার বহাল থাকে, তবে তৈরি পোশাক খাত সমস্যায় পড়তে পারে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১ হাজার ৩২২টি পোশাক কারখানা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।

উচ্চ শুল্কহারের কারণে এই উৎপাদন ইউনিটগুলো আগের মতো অর্ডার পেতে ব্যর্থ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়নি, কারণ তাদের আলোচনায় তেমন ভূমিকা নেই।

'আমাদের বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন, যেখানে লবিস্টদের ভূমিকা নেই,' বলেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শুল্ক আলোচনাকে সহজ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছ থেকে কম শুল্ক সুবিধা পেতে বাংলাদেশ আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

3h ago